সাকিব-তামিম দুই বন্ধু আছেন! আছেন রকিবুল কিংবা শাহাদতও! টিভি স্ক্রিনে নাম দেখে মনে এমন বিভ্রম জাগতেই পারে- এটা অর্ধযুগ আগের বাংলাদেশ জাতীয় দল কিনা! না, এটা বাংলাদেশ জাতীয় দল নয়। এই তামিম- তানজিদ হাসান তামিম আর সাকিব- তানজিম হাসান সাকিব। তবে রকিবুল হাসান ও শাহাদত হোসেনের নামের বানান একই। জাতীয় দলের তারকাদের নামের সঙ্গে মিল থাকা এ চার তরুণ ক্রিকেটারই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে স্বপ্ন পথে আর এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেলেন। গতকাল কোয়ার্টার ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১০৪ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো যুব বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ। মাত্র ১৯ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন রকিবুল হাসান। বাংলাদেশ দলের এই স্পিনার গ্রুপ পর্বের ম্যাচে স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করেছিলেন। তার দুর্দান্ত বোলিংয়েই কাল পচেফস্ট্রুমে ২৬২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৫৭ রানেই গুটিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস। দ্বিতীয়বারের মতো সেমির টিকট পায় বাংলাদেশ। এই মাঠেই আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি সেমির লড়াইয়ে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশের যুবারা। জাতীয় দলের জার্সিতে তামিম ইকবালের আগ্রাসন যেন দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে! তবে গতকাল পচেফস্ট্রুমের তামিমের সে কি অগ্নিমূর্তি! তার ব্যাটিংয়ে রীতিমতো নাস্তানাবুদ দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা। তার ৮০ রানের ইনিংসটি ছিল দেখার মতো। কি অসাধারণ ব্যাটিং স্টাইল! যে শর্ট বল বাংলাদেশ দলের সিনিয়র ব্যাটসম্যানদের কাছে ভীতির কারণ সেই শট বলে কাল পচেফস্ট্রুমে বাউন্ডারি আদায় করে নিয়েছেন তামিম।অসাধারণ ইনিংসটি খেলেছেন ৮৪ বলে। তার ইনিংসে ছিলে ১২টি দর্শনীয় চার। দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন শাহাদত হোসেন। ৭৬ বলে খেলেছেন ৭৪ রানের হার না মানা ইনিংস। তার ইনিংসে ছিল সাতটি অসাধারণ বাউন্ডারির সঙ্গে একটি দুরন্ত ছক্কার মার। যদিও হাফ সেঞ্চুরির আগে একবার নতুন জীবন পেয়েছেন। গতকাল ৬২ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেন শাহাদত। তারপর দ্রুতই পরের ২৪ রান করেন। হাফ সেঞ্চুরি করেছেন তৌহিদ হৃদয়। ৭৩ বলে করেছেন ৫১ রান। তবে হাফ সেঞ্চুরির পর যখন হাত খুলে খেলবেন হৃদয় তখনই আউট হয়ে যান। শাহাদতের সঙ্গে তার সেঞ্চুরি জুুটিটি ছিল অসাধারণ! তামিম-শাহাদতের দুরন্ত ব্যাটিংয়ের বল হাতে দাপট দেখিয়েছেন সাকিব ও রকিবুল। দক্ষিণ আফ্রিকার পতন ঘটা প্রথম চার উইকেটের মধ্যে দুই বোলার দুটি করে শিকার করেছিলেন। ব্যাটিংয়েই কাল বড় ব্যবধান গড়ে দেয় বাংলাদেশ। তামিম, শাহাদত ও হৃদয়ের হাফ সেঞ্চুরিতে ২৬১ রান করে যুবা টাইগাররা। টস হেরে কাল প্রথমে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। পারভেজ হোসেন ইমন ও তামিমের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৬০ রান। ব্যক্তিগত ১৭ রানে ইমন আউট হলেও তামিম উইকেটে ছিলেন ২৮ ওভার পর্যন্ত। একটা সময় মনে হচ্ছিল সেঞ্চুরি তার জন্য সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু ৮০ রান করার পর পয়েন্টে ক্যাচ তুলে দেন এই ওপেনার। পুরো ইনিংসে যেন একবারই ভুল করেছেন। অসাধারণ এক ইনিংস খেলার পরও ছোট্ট এক ভুলেই যেন সেঞ্চুরিটা হলো না! তার পরও তামিমের ৮০ রানের ইনিংসে মুগ্ধ ক্রীড়ামোদীরা। তামিম যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছেন। ইদানীং জাতীয় দলে তামিম ইকবালকে আর আগ্রাসী হতে দেখা যায় না। কিন্তু পচেফস্ট্রুমে তরুণ তামিমের ব্যাটে সে কি আগ্রাসন! তার দুর্দান্ত ব্যাটিংয়েই তো বাংলাদেশের ইনিংসের ভিতটা শক্ত হয়েছিল। যুব বিশ্বকাপের প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে প্রথমে ব্যাট করে ভারত করেছিল ২৩৩ রান। দ্বিতীয় কোয়ার্টারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ করেছিল ২৩৮ রান। তবে ভারত জিতলে সেমিফাইনাল নিশ্চিত হলেও বিদায়ঘণ্টা বেজে গেছে উইন্ডিজের। তবে দুই ম্যাচের স্কোর কার্ড দেখে তৃতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশের করা ২৬১ রানের ইনিংস বেশ স্বাস্থ্যবানই মনে হবে। টাইগার যুবাদের ব্যাটিং স্টাইল দেখে মুগ্ধ হয়েছেন অসি কিংবদন্তি টম মুডি। গতকাল ভারাভাষ্য দেওয়ার সময় তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ক্রিকেট যে অনেক এগিয়েছে তা তরুণ এই ক্রিকেটারদের দেখেই আঁচ করা যায়।’ তামিমের প্রশংসা করে বলেন, ‘সত্যিই দারুণ কৌশলী ব্যাটসম্যান!’
আপনার মতামত লিখুন :