অপূর্বার মৃত্যুর কারন কি ‘ব্লু হোয়েল’ ?


F.Taj প্রকাশের সময় : অক্টোবর ১০, ২০১৭, ১১:২৮ AM / ৬৮
অপূর্বার মৃত্যুর কারন কি ‘ব্লু হোয়েল’ ?

রাজধানীর ধানমন্ডির সেন্ট্রাল রোড এলাকায় আত্মহননকারী অপূর্বা বর্ধন ব্লু হোয়েল গেমে আসক্ত ছিল কি না, সে ব্যাপারে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত কোনো তথ্য জানা যায়নি। অপূর্বা বর্ধনের পরিবারও এ ব্যাপারে নিশ্চিত কোনো তথ্য দিতে পারেনি। তারা যে তথ্য দিচ্ছে, তাতে ব্লু হোয়েল খেলার পর একজন মানুষের স্বাভাবিক যে পরিবর্তন আসবে তার সবকিছু অপূর্বার মধ্যে ছিল না।

গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডির সেন্ট্রাল রোডের ৪৪ নম্বর বাসার ৫বি ফ্ল্যাটের বাসা থেকে অপূর্বার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। সে হলিক্রস স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।

অপূর্বা বর্ধনের ব্লু হোয়েলে আসক্তির বিষয়ে তার বাবা আইনজীবী সুব্রত বর্ধন বলেন, সে সম্প্রতি রকমারি ডটকমের মাধ্যমে অনেকগুলো ভূতের বই কিনেছিল। তবে তাকে ভূতের ছবি দেখতে দেখিনি। মৃত্যুর কিছু দিন আগে সে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ছাদে যেত। তবে তাকে কখনো সন্দেহ করা যায়নি। কারণ তার বডি ল্যাংগুয়েজ দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে সে কোনো কিছুতে আসক্ত। অপূর্বা যেদিন আত্মহত্যা করেছিলেন তার আগের দিনের কর্মকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে সুব্রত বর্ধন বলেন, ‘সেদিন বুধবার ছিল। আমি চট্টগ্রাম থেকে খুব সকালে বাসায় আসি। সেখানে অনেক কাজ করায় আমি ক্লান্ত ছিলাম। আমার ক্লায়েন্টদের কারণে সকালে বিশ্রামও নিতে পারিনি। এজন্য সকাল সাড়ে ৯টার দিকে টিভি রুমে বসে টিভি দেখছিলাম। এ সময় অপূর্বা আমার পাশে এসে বসে। প্রায় ১৫ মিনিটের মতো আমার সঙ্গে টিভি দেখে। তারপর বলে, বাবা তুমি তো অনেক ক্লান্ত, তোমার ঘুমানো উচিত। ডাক্তার না তোমাকে বলেছিল ক্লান্ত অবস্থায় ঘুম না আসলে ট্রিপিন (ঘুমের ওষুধ) খেতে। আমি স্বাভাবিকভাবে ১০ এমজির ট্রিপিন খাই। খুব বেশি শারীরিক ট্রেস থাকলে ২৫ এমজি খাই।

তিনি বলেন, সেদিন অপূর্বা আমাকে ২৫ এমজির একটি ট্যাবলেট দেয়। সেটি খাওয়ার পর সে আমাকে ডায়াবেটিসের ইনসুলিন দেয়। এর ২০ মিনিট পর আমি খাবার খেয়ে মেয়ের রুমে ঘুমিয়ে পড়ি। রাত ১টার দিকে অপূর্বা আমাকে ডেকে বলে, মা ডাকছে। তখন আমি তাকে বললাম, আমি তোমার রুমেই তো কমফোর্ট ফিল করছি। তুমি তোমার মায়ের সঙ্গে ঘুমাও। তখন সে বলে বাবা তুমি ভুলে গেছ, আগামী সোমবার আমার মডেল টেস্ট আছে। আমাকে পড়তে হবে। পরদিন অপূর্বাকে আমরা ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পাই।

সুব্রত বর্ধন বলেন, যখন অপূর্বার সুরতহাল প্রতিবেদন করা হচ্ছিল তখন কোলাহলের মধ্যে কেউ একজন বলছিল, অপূর্বা ব্লুহোয়েলে আসক্ত ছিল কি না? তার পর আমি ইন্টারনেটে ও বেশ কয়েকজন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলাপ করে এ সম্পর্কে জানি। সে আত্মহত্যার আগে একটি সুইসাইডাল নোটও রেখে যায়। সেখানে লেখা ছিল, নো ওয়ান রেসপনসিবল ফর মাই ডেথ। এরপর একটি ইমোটিকন- যেটি ছিল মুখের অবয়ব, যেখানে একটি চোখ মাত্রাতিরিক্ত ছোট। সুব্রত বর্ধন জানান, তার মেয়ে কারো সঙ্গে ঝগড়া করত না। পরিবারের কারো সঙ্গে তার কোনো সমস্যা না হলেও মাঝেমধ্যে অভিমান করত। এ ছাড়া মাদকাসক্তদের মতো কোনো বৈশিষ্ট্য তার মধ্যে দেখা যায়নি। তবে সে রাত জেগে মোবাইল ব্যবহার করত। ভূতের বই পড়ত। তবে ভূতের সিনেমা দেখতে তাকে দেখা যায়নি। ইন্টারনেট অনুসন্ধান ও বেশ কয়েকজন প্রযুক্তি বিশ্লেষকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ব্লু হোয়েল গেম মূলত ৫০ ধাপের হয়। খেলা শুরুর আগে অংশগ্রহণকারীকে টার্ম অ্যান্ড কন্ডিশন জানানো হয়। এতে যদি অংশগ্রহণকারী রাজি থাকেন তাহলে খেলা শুরু হয়। তাই বলা চলে অন্যান্য অনলাইনভিত্তিক খেলাগুলো থেকে এটি ভিন্ন। সবচেয়ে বড় ভিন্নতা এ খেলায় একজন কিউরেটর থাকেন। তিনি যা যা বলেন অংশগ্রহণকারীকে সেসব কাজ করতে হয়। শুরুতে হালকা কিছু কাজ দেওয়া হলেও ধীরে ধীরে ভয়ংকর সব কাজ দেওয়া হয়।

জানা গেছে, ব্লু হোয়েল গেমের উদ্ভাবক ফিলিপ বুদেকিন নামের একজন রুশ। তিনি মনোবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী ছিলেন। এক সময় তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ড্রপ আউট’ হন। এরপর ব্যাপক হতাশা থেকে তিনি এই খেলা তৈরি করেন। এই খেলায় আসক্ত হয়ে যদি কেউ আত্মহত্যা করেন তাহলে বুদেকিন নিজেকে সার্থক বলে মনে করেন।

বুদেকিন পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেছিলেন, ‘যারা মানসিকভাবে বিষাদগ্রস্ত তারা সমাজের কীট বা আবর্জনা। তাদের পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।’ সেই ধারণা থেকে ব্লু হোয়েল তৈরি করেছেন তিনি।