বসন্তের প্রথম দিন, উৎসবমুখর হয়ে ওঠে বাঙালি। সাজপোশাকেও থাকে উৎসবের আমেজ। কারও চাই বাঙালিয়ানা, তো কারও স্বাচ্ছন্দ্য পাশ্চাত্য পোশাকে। এবার আবার ফাল্গুনের প্রথম দিনটিতেই বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। ফাগুনে ভালোবাসা একাকার।
বসন্ত উৎসব আর ভালোবাসা দিবস সামনে রেখে ফ্যাশন হাউসগুলো করেছে নানান আয়োজন। মেয়েদের জন্য থাকছে শাড়ি, কামিজ, কুর্তি, টিউনিক, টপ। প্যান্টও কিনতে পারেন মিলিয়ে। কিংবা বেছে নিন সালোয়ার–কামিজ। ছেলেদের জন্য পাঞ্জাবিই বেশি। টি-শার্ট, পোলো টি-শার্ট আর ফতুয়াও রয়েছে কিছু। চাইলে শার্টও পরা যেতে পারে, তবে শার্ট কম চলে এ উৎসবে। পাঞ্জাবির সঙ্গে ফুলেল নকশার কটিও বেছে নিতে পারেন। অধিকাংশ পোশাকই সুতি কাপড়ের, কিছু লিনেন, ভিসকাস, পলিএস্টারও রয়েছে। পোশাকে থাকছে ফুলেল মোটিফ।
সারা লাইফস্টাইল লিমিটেডের সহকারী ব্যবস্থাপক (ডিজাইন) সিলভিয়া স্বর্ণা বলেন, এ সময়টায় হালকা গরম থাকে আবহাওয়া। আবার শীতও একেবারে বিদায় নেয় না। আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখেই বেছে নেওয়া হয় পোশাকের ম্যাটেরিয়াল। সুতি, ওভেন ভিসকাস, জর্জেট আর স্প্যানডেস কাপড়ের পোশাক এনেছেন তাঁরা। স্ক্রিন প্রিন্ট, সাবলিমিশন প্রিন্ট, এমব্রয়ডারির (সিকোয়েন্স) মধ্যে থাকছে ফ্লোরাল মোটিফ। ইংরেজিতে ভালোবাসার পঙ্ক্তি লেখা পোশাকও রয়েছে। উৎসব দুটির সঙ্গে হলুদ, শর্ষে হলুদ, লাল, মেরুন তো যায়ই; তবে সাদা, চাঁপা সাদা, কালো, নেভি ব্লুর মতো ভিন্নধারার রংও থাকছে।
রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কে বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসের দোকানের কর্মরত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল আরও নানান তথ্য। নবরূপার জ্যেষ্ঠ বিক্রয় নির্বাহী মো. শাহাবুদ্দীন মুন্সী বলেন, এমব্রয়ডারি, ব্লন্ট, হ্যান্ড পেইন্ট, স্ক্রিন প্রিন্ট আর কাটওয়ার্ক রয়েছে তাঁদের আনা পোশাকগুলোতে। টাঙ্গাইল শাড়ি থাকছে। সিল্ক, হাফসিল্ক আর জামদানি সিল্কের আয়োজন রয়েছে। সুতি ও এন্ডি সুতির পাঞ্জাবিও আছে।
পোশাক আরও রঙিন
সেইলরের যমুনা ফিউচার পার্ক শাখার ল্যান্সি জোসেফ রোজারিও বলেন, বসন্তে মানুষ একটু রঙিন পোশাক পছন্দ করে। প্রকৃতির রঙের কথা মাথায় রেখে বাহারি রঙের প্রিন্টেড পোশাক এনেছেন তাঁরা। এ ছাড়া মেয়েদের পোশাকের হাতার কাটে থাকছে বৈচিত্র্য। লা রিভ আর টেক্সমার্টের পোশাকেও রয়েছে বৈচিত্র্যময় হাতা। মেয়েদের জন্য পোশাকের সামনের পুরোটাই বোতাম আঁটা—এ ধরনের পোশাকও রয়েছে টেক্সমার্টে। চাইলে বোতাম খুলে ছড়িয়ে পরা যাবে অন্য পোশাকের সঙ্গে—এমনটাই জানালেন টেক্সমার্টের শাখা ব্যবস্থাপক মো. ফয়েজুল ইসলাম। লা রিভে পাবেন সবুজ, নীল কিংবা হলুদ শেডের পাঞ্জাবি। মেরুন, হলুদ বা বাসন্তী টি-শার্টও রয়েছে। সাদা টি-শার্টেও আছে ফুলেল নকশা।
অঞ্জনসের যমুনা ফিউচার পার্ক শাখার সহকারী ব্যবস্থাপক তসলিমা ফেরদৌস জানালেন, পরিবারের সদস্যদের জন্য একই ধাঁচের পোশাক এনেছেন তাঁরা। কুসুম হলুদ, গাঢ় হলুদ, বাসন্তী, সবুজ আর কমলাজাতীয় রঙের পোশাক এনেছেন তাঁরা। গোলাপি আর নীলের ছোঁয়াও থাকছে। হলদে রঙের সঙ্গে লালচে রঙের সমন্বয়ও চলছে বেশ। ব্লক, স্ক্রিন প্রিন্ট, হাতের সেলাই আর মেশিন এমব্রয়ডারি করা হয়েছে পোশাকে। কে ক্রাফট থেকেও জানা গেল, পরিবার বা জুটির কথা মাথায় রেখে হলুদ-কমলা পোশাক করেছে তারা। নকশায় থাকছে ভিন্নতা। তবে সুতার কাজের প্রাধান্য খুব একটা থাকছে না।
পোশাকে বৈচিত্র্য
ডোরাকাটা নকশা থাকছে কিছু পোশাকে। বাহারি হাতা রয়েছে মেয়েদের পোশাকে। হয়তো হাতাটা লম্বা, তবে সেটির বাইরের দিকটা ফাড়া। হাতার নিচের দিকটা ঢোলা হতে পারে, চাপা হতে পারে। পুরো হাতাটাও ঢোলা হতে পারে। আবার হাতার নিচের দিকে থাকতে পারে বাড়তি ছড়ানো অংশ। ছোট হাতাটাও ঢোলা হতে পারে। বড় হাতার নিচের অংশে দুটি আলাদা রঙের ব্যবহারও চোখে পড়বে। হাতার নিচের দিকটায় স্তরে স্তরে সাজানো নকশার মতোও দেখা গেল কোনো পোশাকে। পোশাকের নিচের দিকের কাট একটু ভিন্ন ধাঁচের হতে পারে। ডান আর বাম—দুটি অংশ হয়তো সমানভাবে কাটা নয়। একপাশের হাতায় আর পোশাকের একটা দিকে হয়তো একটু অন্য রকম নকশা থাকল। গলার একপাশে হয়তো নকশা করা থাকল। কিংবা পোশাকের সামনের দিকটা হয়তো পেছনের চেয়ে লম্বায় খানিকটা কম। শর্ট টপের নিচের অংশটা হয়তো একটু চাপা। দুটি ভিন্ন স্তর আছে, এমন পোশাকও রয়েছে বাজারে। কিংবা নিচের দিকটায় একপাশে শাড়ির মতো একটু কুঁচি।
আপনার মতামত লিখুন :