মুক্তাগাছায় গ্রামবাসীর বাঁধার মুখে ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ এন্ড কোম্পানী কর্তৃক ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের কাজ বন্ধ রয়েছে। থমথমে বিরাজ করছে গোটা এলাকায়। পরিবেশ বিপর্যয় হওয়ার আশঙ্কায় ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের কাজ যে কোনো মূল্যে বন্ধ করার ঘোষণা দিয়ে এলাকাবাসী প্রতিদিনই নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে। এতে অনেকটা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে ইউনাইটেড গ্রুপের বিদ্যুৎ উৎপাদনের কেন্দ্র স্থাপন। রবিবার সকালে পুণরায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন এলাকায় মাটি ভরাটের কাজ করতে গেলে এলাকার কয়েকশত নারী ঝাড়ু, লাঠি নিয়ে ঘটনাস্থল টহল দেয়।
বর্তমান সরকার আগামী বছর থেকে সারাদেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ঘোষণা দিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এ লক্ষ্যে সরকার কয়েকটি কোম্পানিকে বেসরকারিভাবে ডিজেল চালিত ১৭টি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন দেয়। ওইসব বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে আগামী বছরের মার্চের মধ্যে চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে জমা হবে। এ প্রকল্পের আওতায় ইউনাইটেড গ্রুপ ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল সড়কের পাশে মুক্তাগাছা উপজেলার সত্রাশিয়া এলাকায় ইউনাইটেড ময়মনসিংহ পাওয়ার লিমিটেড নামে ১৩ একর জমি কিনে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ শুরু করে। গত ৮ সেপ্টেম্বর সাবেক এমপি ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব কেএম খালিদ বাবু ও সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আকবর আলী সরকারের উপস্থিতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন উদ্বোধন ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করলে এলাকাবাসী বাধা দেয়। পরবর্তীতে গত ১৫ সেপ্টেম্বর এমতাবস্থায় পরিবেশ শান্ত করার লক্ষে স্থানীয় বর্তমান এমপি সালাহউদ্দিন আহমেদ মুক্তি, উপজেলা চেয়ারম্যান জাকারিয়া হারুন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবর্ণা সরকার, মপবিস-১ এর জিএম মকবুল হোসেন, ওসি (তদন্ত) মাহবুবুল হকসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে ও পরিস্থিতি সমাধানের লক্ষ্যে ইউনাইটেড কোম্পানি কর্তৃপক্ষকে আপাতত প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়।
এদিকে এলাকার কিছু সংখ্যক ব্যক্তি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের সুফল ও ক্ষতিকর দিক গুলো জানতে জামালপুর, আশুগঞ্জসহ বিভিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র পরিদর্শন করার পর আন্দোলন আরও তীব্রতর হয়ে উঠেছে। এলাকাবাসী জানায় কৃষি জমি ধ্বংস ও শব্দদূষণের আশঙ্কায় সাতাশিয়া, গন্ধর্বপুর, সত্রাশিয়াসহ কয়েকটি গ্রামের শতশত মানুষ নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় এ কার্যক্রমে বাধা দেয়। স্থানীয় ইউপি সদস্য শামীম আহমেদ বলেন, জমি কেনা ও মাটি ভরাটের সময় এলাকার মানুষ এ বিষয়ে জানতে চাইলে এলাকাবাসীকে প্রথমে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি ও পরে সিরামিক কারখানা হবে বলে জানানো হয়। সম্প্রতি বিদ্যুৎ পাওয়ার স্টেশন নির্মাণের বিভিন্ন সরঞ্জাম দেখে এলাকাবাসী হতবাক হয়ে যায়। বিভিন্ন সূত্রে তারা পাওয়ার স্টেশন নির্মাণের কথা শুনে এর কুফলের ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে জোটবদ্ধ ভাবে এ স্থাপনা নির্মাণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে।
ইউনাইটেড বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজার নিতিশ কুমার মন্ডল এ প্রতিনিধিকে বলেন, এলাকার কিছু লোক না বুঝে প্রকল্পের কাজ করতে বাধা দেয়। যে কারণে প্রতিদিনই প্রচুর লোকসান গুনতে হচ্ছে কোম্পানির। আমরা এলাকাবাসীকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। আশা করছি তাড়াতাড়ি কাজ শুরু করতে পারব। বাঁধার মুখে পরলে কাজ কোম্পানীর পাশাপাশি দেশের উন্নয়নে ক্ষতি হবে।
সূত্র জানায় এ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১৫ বছর মেয়াদে বিদ্যুৎ কিনবে সরকার। প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুতের দাম পড়বে ৮ দশমিক ৪১৬৬ টাকা। এ হিসাবে ১৫ বছর মেয়াদে বিদ্যুৎ ক্রয়ে সরকারের ব্যয় হবে প্রায় ১৭ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর এ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনে এইচএফও ফার্নেস ওয়েল অর্থাৎ হেভি ফুয়েল ওয়েল জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হবে। পাশাপাশি উৎপাদিত বিদ্যুৎ ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রোডিউসার-আইপিপি’-এর মাধ্যমে চাহিদা অনুযায়ী গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে। গত বুধবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :