অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করবে বিএনপি
একাদশ নির্বাচনকে কীভাবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে পরিচালনা করা যায়, তার একটি রূপরেখা তৈরি করেছে বিএনপি। বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে ওই রূপরেখা দেওয়া হবে বলে দলীয় সূত্রে জানানো হয়। নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) সব ধরনের সহযোগিতা করতে চায় বিএনপি।
বিএনপি নেতাদের দাবি, শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন ছাড়া কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু ও অবাধ সম্ভব নয়। যে কারণে একটি ‘সহায়ক’ সরকারের দাবি দলটির। যে নামেই হোক নির্বাচনকালীন সরকার হতে হবে দল নিরপেক্ষ। তাই আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসিকে একটি প্রস্তাব দিতে চায় বিএনপি।
এর আগে গত বছর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে নতুন ইসি গঠনের জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া একটি রূপরেখা তুলে ধরেছিলেন। পাশাপাশি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা যা করার প্রযোজন তারও একটা প্রস্তাব দেন তিনি।
জানা গেছে, ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও নতুন ভোটার তালিকা নিবন্ধীকরণ যোগ্য সকল নাগরিক, রাজনৈতিক নেতাকর্মী, কারাবন্দি এবং নানা মামলা থাকা নেতাকর্মীদের ভোটার করার বিষয়ে সুপারিশ করা হবে বিএনপির এই প্রস্তাবে। এ প্রস্তাবে নির্বাচনের সময়ে প্রতিরক্ষাবাহিনী মোতায়েন ও তাদের ম্যাজিস্ট্রেরিয়াল ক্ষমতা প্রদান, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগ, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পূর্বে নির্বাচনী পর্যবেক্ষক সংস্থাকে দেশের প্রচলিত আইন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্বারা নিবন্ধিত হতে হবে। রাজনৈতিক দলের প্রকাশ্যে আনুগত্যপোষণকারী কোনো প্রতিষ্ঠানকে পর্যবেক্ষক করা যাবে না।
এছাড়া তফসিল ঘোষণার পর মাঠ প্রশাসনে বদলির এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের। বিগত পাঁচ বছরে যেসব কর্মকর্তা জেলা ও উপজেলায় কাজ করেছেন, তাদের নতুন এলাকায় বদলি করতে হবে। নির্বাচন কমিশন একটি কমিটি গঠন করবে, যারা বিগত ২০০৮ ও ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছে সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করতে পারবে।
রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী কিংবা দলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশকারী ব্যক্তি নির্বাচন পর্যবেক্ষক হতে পারবেন না। নির্বাচনী আইন ভঙ্গের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নির্বাচন কমিশন পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ প্রদান করবে।
নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশন প্রতিরক্ষাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা প্রদান করবে। সেই সঙ্গে নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তাদের বিচারিক ক্ষমতা দিতে হবে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের আর্থিক স্বাধীনতা থাকতে হবে, নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে। ভোটগ্রহণের সময় ব্যালট বাক্স পরিপূর্ণ হয়ে গেলে তা পোলিং বুথেই রাখতে হবে। ভোট গ্রহণের পর খালি ব্যালট বাক্স যদি থাকে তা নিরাপদে রাখতে হবে।
নির্বাচন কমিশনকে অধিকতর শক্তিশালীকরণে বিধিবিধান ও আরপিও সংস্কার করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের রূপরেখা অবশ্যই জাতির সামনে প্রকাশ করা হবে। জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচনে পর্যবেক্ষক নিয়োগ করতে হবে।
নির্বাচনের সময় কয়েকটি মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কাজ করবে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এমনটাও বিএনপির প্রস্তাবে তুলে ধরা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনকে কী ধরনের প্রস্তাব দেব, সেটা দিলেই সবাই জানতে পারবে। আমাদের নেত্রী একটি রূপরেখা দেবেন, এটা আগেই ঘোষণা করা আছে। সেই মোতাবেকই আমরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলব।’
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সংলাপ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ বিষয়ে ইসি সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসির করা রোডম্যাপের আংশিক খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী জুলাই মাসের শেষের দিকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু হবে এবং এটা চলবে আগস্ট পর্যন্ত। তিনি আরও বলেন আগামী ৩০ জুলাই থেকে সংলাপ শুরুর প্রস্তুতি নির্বাচন কমিশন নিচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :