নতুন অর্থবছরের বাজেট নিয়ে এক সভায় অর্থমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ভ্যাট আইনের বাস্তবায়ন নিয়ে এক ব্যবসায়ীর হুমকির পর উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছে। গতকাল রোববার ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতির (এফবিসিসিআই) যৌথ সভায় এই হট্টগোল হয়। আলোচনার একপর্যায়ে ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরামের সেক্রেটারি এফবিসিসিআই পরিচালক আবু মোতালেব অভিযোগ করেন, সরকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ না দিয়েই ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করতে চাইছে।
২০১২ সালের এই ‘মূসক ও সম্পূরক শুল্ক আইন’ কার্যকর করার কথা ছিল গত বছরের ১ জুলাই থেকে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে তা পিছিয়ে দেয় সরকার। তখন বিদ্যমান প্যাকেজ ভ্যাটের হার বাড়িয়ে বলা হয়, ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট নেওয়া হবে। ব্যবসায়ীরা তা আরও পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে এলেও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সম্প্রতি ওই তারিখ থেকেই নতুন আইন কার্যকরের সিদ্ধান্তে অটল থাকার কথা জানান। আবু মোতালেব বলেন, নতুন ভ্যাট আইনের বিষয়ে ব্যবসায়ীদের জানাতে এফবিসিসিআই ও এনবিআর কিছু কাজ করলেও তার ‘ফলাফল শূন্য’। তারা কিছু লোক দেখানো প্রশিক্ষণ দিয়েছিলৃ চকবাজারের ব্যবসায়ীদের প্রশিক্ষণ না দিলে তারা কীভাবে জানবে ইলকেট্রনিক ক্যাশ রেজ্রিার কী? ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরামের এ নেতা বলেন, এমন অবস্থায় ভ্যাট আইন বস্তবায়নের বিরোধিতা করছি আমরা। এফবিসিসিআই যে প্রস্তাব দিয়েছে তা মানা না হলে হলে আমরা আন্দোলন করব। অর্থমন্ত্রী ও এনবিআর চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতেই মোতালেব বলেন, আমাদের স্কুলছাত্রদের মতো রাস্তায় দাঁড়িয়ে আন্দোলন করতে বাধ্য করবেন না। আমাদের দাবি না মানলে আমরা তাই করব। পাঁচ কোটি টাকার কম টার্নওভারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট আইনের আওতায় আনা হলেও আন্দোলনের হুমকি দেন তিনি। এ সময় অর্থমন্ত্রী তাকে থামিয়ে দিয়ে নিজের মাইক অন করে বলেন, দেশে আট লাখ নিবন্ধিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকলেও ভ্যাট দেয় মাত্র ৩২ হাজার। আপনারা ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা কতজন ভ্যাট দেন? আবার আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছেন। আপনারা আন্দোলন করলে আমরা তা দমন করব।
অর্থমন্ত্রীর এ বক্তব্যের পর উপস্থিত ব্যবসায়ী নেতারা উচ্চকন্ঠে প্রতিবাদ শুরু করেন। কেউ কেউ দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘আন্দোলন দমনের হুমকি দেবেন না’। এমন পরিস্থিতে এফবিসিসিআইয়ের সহ সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন ব্যবসায়ীদের শান্ত করার চো করেন। তিনি বলেন, আপনারা ধৈর্য ধরেন। আশা করি সরকার আমাদের দাবি মেনে নেবে। বাজেটে কী আছে জানি না। এখনো আমরা বাজেট দেখিনি। ব্যবসায়ীদের ন্যায্য দাবি মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানও ব্যবসায়ীদের হুমকি না দিয়ে এ ধরনের সভার যথাযথ ভাষা প্রয়োগের আহ্বান জানান। পরে বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওই প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আবু মোতালেব, উনি অত্যন্ত বড় বড় থ্রেট দিয়েছেন। একেবারে থ্রেট। দেশটা বন্ধ করে দেবেন- এরকমই বলেছেন। আবার আমারও উত্তেজিত হওয়াটা ঠিক হয় নাই। অতিরিক্ত হয়েছে। এটা আপনারা একটু চিন্তা করবেন। তার থ্রেটটা উইথড্র করা উচিত।
আপনার মতামত লিখুন :