গান করার ইচ্ছে আমার এখনো মরেনী। তবে গানের কথা হতে হবে সেই রকম , যা আমার সঙ্গে যায়। এখনো গান গাই তবে আগের মতো না। বাংলাদেশ বেতার আগারগাঁওয়ে বসে কথাগুলো বলেছেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম শিল্পী মলয় কুমার গাঙ্গুলী।
দেশ স্বাধীন ও স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে গান গেয়ে শ্রোতাদের মন জয় করেছেন তিনি। তার জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে ‘ওরে ও বাঙালী’ ,‘আজকে সবার মুখের হাসি’ ,‘২১সের ঝড় বইছে’ ‘লালন হইয়া গেলাম’, এছাড়াও ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত, বঙ্গবন্ধু মরে নাই’, আমি কারো কথায় যখন তখন নাচিনা’, গান দুটি ব্যাপক পরিচিতি এনে দিয়েছে এই শিল্পীকে।
শিল্পী মলয় কুমার বলেন, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে এই গান দুটি শ্রোতারা এতো শুনেছে যে সবার মুখে মুখে গান দুটি। এই গান দুটিকে পুঁজি করে অনেকে অনেককিছু করেছে। আমার কাছেও গানদুটি নিয়ে অনৈতিক প্রস্তাব এসেছিল যা বিবেকের তারনায় ফিরিয়ে দিয়েছি।
তিনি বলেন, শুধু বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে, শ্রদ্ধাকরে গান করেছিলাম। অন্য কোন কারণে নয়। বঙ্গবন্ধুর প্রসঙ্গ আসতে প্রচার বিমূখ এই শিল্পী বলেন, ১৯৬৪ সালে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমার প্রথম কথা হয়। আমার মনে আছে সেই দিন তিনি আমাদের বিরানী খাইয়ে ছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমরা স্বাধীন বাংলা বেতারের শিল্পী কিভাবে সে দিন গুলোতে কাজ করেছিলাম তা সুগন্ধাতে তার অনুরোধে দেখিয়ে ছিলাম ।আমাদের দেখানো পার্ফরমেন্স দেখে তিনি বলেছিলেন ‘তোরাই অসাধ্যকে সাধন করেছিস। বঙ্গবন্ধুর প্রিয় সেই শিল্পীরা আজ অবহেলিত। তিনি দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বলেন, স্বাধীনতার ৪৫ বছর পর স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের ৪৫ জনের একটি তালিতা প্রকাশ করেছে সরকার। যা অনেক আগেই হওয়ার কথা ছিল। বেতার না থাকলে যুদ্ধ কত বছর চলতো তা বলা মুসকিল ছিল। শুধু গানে উজ্জীবিত হয়েই দেশের আপামর জনতা ও মুক্তিযোদ্ধারা দেশের জন্য কাজ করেছিল।
শুধু স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্র নয়, জনপ্রিয় এই শিল্পী চলচ্চিত্রেও গান গেয়েছেন। চলচ্চিত্রে তার জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে, অনুরাগ ছবির ‘আমার মনতো বসেনা সজনী’, পুত্রবধু ছবিতে ‘গুরু উপায় বলো না’ নায়ক রাজ রাজ্জাকের ছবিতে গেয়েছেন‘ গোলেমালে গোলেমালে পিরিত কইরো না’, রেল লাইন বহে সমান্তরাল,’ ‘এক নয়নে কান্দ।’ প্রভৃতি গান। চলচ্চিত্রে এতো কালজয়ী গান উপহার দেওয়ার পরও মেলেনী এই শিল্পীর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
তিনি আক্ষেপের সুরে বলেন, হয়তো মরার পরে আমাকে মরনোত্তর পুরস্কার দিতে পারে, এজন্য আমার স্ত্রীকে আগাম নিষেধ করে দিয়েছি ওমন পুরস্কার না নেওয়ার জন্য। আমি মরোনোত্তর পুরস্কার চাই না। আমার পরিবারে আমার স্ত্রী শিখা চক্রবর্তী ও আমার এক মেয়ে টুম্পা রয়েছে। ওর ঘরে আমার এক নাতি রয়েছে। বাকি দিনগুলো তাদের সাথে কাটিয়ে দিতে চান মলয় কুমার।
আপনার মতামত লিখুন :