একুশে পদকপ্রাপ্ত কিংবদন্তি চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব সুভাষ দত্ত। তাকে অনেকে দাদু বলেই ডাকেন। তিনি ছিলেন একাধারে চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক, অভিনেতা, চলচ্চিত্র চিত্রশিল্পী, চিত্রনাট্যকার ও শিল্প নির্দেশক। সুভাষ দত্তর চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ (বুধবার)। এ উপলক্ষে আজ সন্ধ্যায় বিশেষ স্মরণ সভার আয়োজন করেছে নাটক ও চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান মৌলিক কমিউনিকেশন। প্রতিষ্ঠানের শান্তিনগরের নিজস্ব কার্যালয়ে এ উপলক্ষে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে দেশের বিশিষ্ট সংস্কৃতিকর্মীরা উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে। ২০১২ সালের ১৬ নভেম্বর ৮২ বছর বয়সে পরলোকে যাত্রা করেন সুভাষ দত্ত। সুভাষ দত্তের জন্ম ১৯৩০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুরের মুনশিপাড়ায় মামার বাড়িতে। পৈত্রিক বাড়ি বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলার চকরতি গ্রামে।তবে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনের নিজ বাড়িতে বসবাস করতেন। তার ২ ছেলে শিবাজী দত্ত ও রানাজী দত্ত এবং ২ মেয়ে শিল্পী দাস ও শতাব্দী মজুমদার। স্ত্রী সীমা দত্ত ২০০১ সালের অক্টোবরে প্রয়াত হন। ১৯৫৭ সালে ভারতের হাইকমিশনের উদ্যোগে একটি চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করে ওয়ারীতে। সেখানে সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’ চলচ্চিত্রটি দেখানো হয়। ‘পথের পাঁচালী দেখেই তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণে অনুপ্রাণিত হন।
সুভাষ দত্তের কাছের সহকারী পরিচালক মারুফ খান প্রেম বলেন, আমরা আজ পুরানো ঢাকায় কিছু এতিম বাচ্চাদের দাদুর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতিবারের মত এবারও খাওয়ানো হবে। তার হাত ধরে এ দেশের চলচ্চিত্র বিষয়বস্তু ও নির্মাণ আঙ্গিকে বৈচিত্র্যতা এসেছিল। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সুনাম ও স্বীকৃতিও এসেছিল এই কৃতী চলচ্চিত্রকারের মাধ্যমে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে সুভাষ দত্তের কর্মজীবনের শুরু হয়েছিল চলচ্চিত্রের পোস্টার এঁকে। এ দেশের প্রথম প্রযোজনা ‘মুখ ও মুখোশ’ চলচ্চিত্রের পোস্টার ডিজাইনার ছিলেন তিনি। এরপর তিনি এহতেশাম পরিচালিত ‘এ দেশ তোমার আমার’ চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন। আর পরিচালক হিসেবে অভিষিক্ত হন ১৯৬৪ সালে ‘সুতরাং’ চলচ্চিত্র দিয়ে। প্রধান অভিনেতা হিসেবে তিনি সেই সময়ের নবাগতা অভিনেত্রী কবরীর (মিনা পাল) বিপরীতে অভিনয় করেন। এটি বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র হিসেবে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র সম্মাননা লাভ করেছিল।
১৯৬৫ সালে ফ্রাঙ্কফুর্ট চলচ্চিত্র উৎসবে ‘সুতরাং’ দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার পায়। এছাড়া ১৯৬৭, ১৯৭৩ ও ১৯৭৯ মস্কো চলচ্চিত্র উৎসব এবং ১৯৬৮ সালে নমপেন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয় সুভাষ দত্তের চলচ্চিত্র।
১৯৭৭ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তার প্রযোজনা ও পরিচালনার ‘বসুন্ধরা’ চলচ্চিত্রটির জন্য সেরা পরিচালক ও প্রযোজকসহ মোট পাঁচটি পুরস্কার লাভ করেন। তার হাত ধরেই কবরী, সুচন্দা, উজ্জল, শর্মিলী আহমেদ, ইলিয়াস কাঞ্চন, আহমেদ শরীফ ও মন্দিরার চলচ্চিত্রে আগমন ঘটে। সুভাষ দত্ত অভিনীত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘রাজধানীর বুকে’, ‘সূর্যস্নান’, ‘তালাশ’, ‘রূপবান’, ‘মিলন’, ‘নদী ও নারী’, ‘ভাইয়া’, ‘ক্যায়সে কাহু’, ‘আখেরি স্টেশন’, ‘সোনার কাজল’, ‘দুই দিগন্ত’, ‘সমাধান’ প্রভৃতি। তার নির্মিত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘কাগজের নৌকা’, ‘আয়না ও অবশিষ্ট’, ‘আবির্ভাব’, ‘বলাকা মন’, ‘সবুজ সাথী’, ‘সকাল সন্ধ্যা’, ‘ডুমুরের ফুল’, ‘নাজমা’, ‘স্বামী স্ত্রী’, ‘আবদার’, ‘আগমন’, ‘শর্ত’, ‘সহধর্মিণী’, ‘সোহাগ মিলন’, ‘পালাবদল’, ‘আলিঙ্গন’, ‘বিনিময়’, ‘আকাক্সক্ষা’ ইত্যাদি।
আপনার মতামত লিখুন :