চাপ ঠেকাতে চীন-রাশিয়ার ওপর নির্ভর মিয়ানমার


F.Taj প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৭, ১২:৫৪ PM / ৬৭
চাপ ঠেকাতে চীন-রাশিয়ার ওপর নির্ভর মিয়ানমার

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের যেকোনো চাপ ঠেকাতে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে মিয়ানমার।

গত দুই সপ্তাহে অন্তত দেড় লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। হাজার তিনেক ঘরবাড়ি পোড়াসহ অন্তত চার শতাধিক রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে বলে জানা যায়। এ পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ থেকে সমন্বিত ঘোষণা আসার কথা ছিল। কিন্তু গত সভাটি কোনো ধরনের যৌথ বিবৃতি ছাড়াই শেষ হয়। এতে চীন ও রাশিয়া ভেটো দিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরবর্তী সভাতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ ঠেকাতে দেশটি তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে বলে বুধবার জানানো হয়। (খবর রয়টার্সের)

মিয়ানমারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা থং তুন জানান, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য চীন ও রাশিয়ার ওপর নির্ভর করছে মিয়ানমার। চলমান সংকটে মিয়ানমারের বিপক্ষে যায় এমন কোনো সিদ্ধান্ত ঠেকিয়ে দেবে বলে আশা থং তুনের।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমরা কয়েকটি মিত্র দেশের সঙ্গে কথা বলছি যেন বিষয়টি নিরাপত্তা পরিষদে না নেওয়া হয়। চীন আমাদের মিত্র এবং রাশিয়ার সাথেও আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। তাই বিষয়টি বেশি দূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না।

মিয়ানমার নেত্রী অং সান সুচি অব্যাহত আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে বুধবার রোহিঙ্গা ইস্যুতে মুখ খুলেছেন। তবে রাখাইনের মানবিক সংকটের বিষয়ে তিনি কোনো কথা বলেননি। উল্টো রোহিঙ্গাদের ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়েছেন এক হাত নিয়েছেন।
নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে একটি বিবৃতিতে বলেন, ‘রাখাইন রাজ্যের সব মানুষকে রক্ষায় সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’
রাখাইন সংকট নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘ভুল তথ্য’ সরবরাহ করা হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে সন্ত্রাসীদের স্বার্থসুরক্ষা’ করা হচ্ছে।

তিনি তার বিবৃতিতে রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা দেড় লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে কিছুই বলেননি।
বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচির বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। গত দুই সপ্তাহে রাখাইন রাজ্যে চলা সহিংসতা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী এ নেত্রী।
মঙ্গলবার জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্থনি গুতেরেসও সুচিকে সতর্ক করে বলেন, মিয়ানমারে জাতিগত রোহিঙ্গা নিধনে আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা নেমে আসবে। রাখাইন রাজ্যে ‘মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে’ উল্লেখ করে জাতিসংঘ মহাসচিব মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে সংকট উত্তরণে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
আর মঙ্গলবার সুচিকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ফোন করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েফ এরদোগান। সেখানে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। এ ছাড়া তুরস্ক থেকে পাঠানো এক হাজার টন ত্রাণ রাখাইন রাজ্যে প্রবেশেরও অনুমতি নেন এরদোগান।
এদিকে বেশ কয়েকটি মুসলিম দেশ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপ রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। জনসংখ্যার দিক থেকে বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ায় বেশ কয়েকটি বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। বুধবার জাকার্তার একটি বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে মিয়ানমারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের আহ্বান জানানো হয়।

এ ছাড়া ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমার সফর করে সুচি ও মিয়ানমার সরকারকে দ্রুত সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানান।
এদিকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার জনস্রোত বেড়েই চলেছে। প্রতিদিন জল ও স্থল পথে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসছে। জাতিসংঘ কর্মীদের বরাতে জানা যায়, গত ১২ দিনে অন্তত দেড় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। গত বছরের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া সংঘাতের ফলে দুই লাখ তেত্রিশ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

বুধবার শতাধিক রোহিঙ্গাসহ তিনটি নৌকা ডুবে যায়। এখন পর্যন্ত ছয়জনের লাশ ভেসে এসেছে, যার মধ্যে তিনজন ছিল শিশু।