নাটকীয় জয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের যুবারা


Ranjan প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ৯, ২০২০, ১১:২৫ PM /
নাটকীয় জয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের যুবারা

পচেফস্ট্রুমে ডাকওয়ার্থ ও লুইস পদ্ধতিতে ৩ উইকেটে জিতেছে বাংলাদেশ। ১৭৭ রান তাড়ায় বাংলাদেশের ইনিংসের ৪১তম ওভার শেষে বৃষ্টি নামে। সে সময় তাদের স্কোর ছিল ১৬৩/৭। আবার খেলা শুরু হলে তারা নতুন লক্ষ্য পায় ৪৬ ওভারে ১৭০। সাত বলের মধ্যে ছুঁয়ে ফেলে লক্ষ্য।

জয়ের কাছে গিয়ে হারের স্মৃতি কম নেই বাংলাদেশের। সিনিয়র ক্রিকেটে একের পর এক ফাইনালে হার দেখেছে বাংলাদেশ। যুব ক্রিকেটেও হয়েছে তীরে এসে তরী ডোবার অভিজ্ঞতা। সবশেষ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপেই বাংলাদেশ জয়ের দুয়ারে গিয়ে হেরেছিল ভারতের কাছে।

এবার কোনো ভুল করেনি বাংলাদেশ। ঠাণ্ডা মাথায় দলকে বন্দরে নিয়ে গেছেন আকবর আলী। পেয়েছেন পারভেজ হোসেন ও রকিবুল হাসানের দারুণ সহায়তা।

টস হেরে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের আগুনে বোলিংয়ের সামনে পড়ে ভারত। শরিফুল ইসলাম ও তানজিম হাসান শুরু করেন মেডেন দিয়ে। ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের খেলান একের পর এক ডট বল।

দিনের শেষটা যেমন বাংলাদেশের, শুরুটাও তাদেরই। কন্ডিশনে পেসারদের জন্য সুবিধা বুঝতে পেরে একাদশে একটি পরিবর্তন আনে বাংলাদেশ। হাসান মুরাদের জায়গায় একাদশে ফেরা পেস বোলিং অলরাউন্ডার অভিষেক দাস আক্রমণে এসেই দলকে এনে দেন ‘ব্রেক থ্রু’। পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন দিব্যানশ সাক্সেনা।

শুরুর কঠিন সময়টা পার করে দেন জয়সাওয়াল ও তিলক ভার্মা। দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের ব্যাটে ধীরে ধীরে বাড়ে রানের গতি। তবে থিতু হওয়ার পরও তাদের ডানা মেলতে দেননি বাংলাদেশের বোলাররা। নিখুঁত লাইন লেংথে বল করে ধরে রেখেছিলেন চাপ।

দলের রান তিন অঙ্ক ছোঁয়ার পর ভাঙে ভারতের প্রতিরোধ। তানজিমের বলে সীমানায় ভার্মার চমৎকার ক্যাচ মুঠোয় জমান শরিফুল। ভাঙে ৯৪ রানের জুটি।

এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায় ভারত। দলটি সবশেষ ৯ উইকেট হারায় ৭৪ রানে; ২১ রানে শেষ সাতটি।

প্রিয়ম গার্গকে দ্রুত থামান রকিবুল হাসান। ভারতের শেষ ছয় ব্যাটসম্যানের কেউ যেতে পারেননি দুই অঙ্কে। শেষ আট ব্যাটসম্যানের মধ্যে দুই অঙ্কে যাওয়া একমাত্র ব্যাটসম্যান ধ্রুব জুরেল ফিরেন রান আউট হয়ে।

এক প্রান্ত আগলে রাখা জয়সাওয়ালের সঙ্গে শুরু থেকে জমে উঠেছিল শরিফুলের দ্বৈরথ। বাঁহাতি বোলারের দারুণ কিছু ডেলিভারি একটুর জন্য ভারতীয় ওপেনারের ব্যাটের কানা নেয়নি। শেষ হাসি হাসেন শরিফুলই। থামান জয়সাওয়ালের পথ চলা।

১২১ বলে ৮ চার ও এক ছক্কায় ১২১ রান করে ফিরেন জয়সাওয়াল। তার বিদায়ের পর বেশিদূর এগোয়নি ভারতের ইনিংস।

৪০ রানে ৩ উইকেট নেন অভিষেক। দারুণ বোলিংয়ে দুটি করে উইকেট নেন তানজিম ও শরিফুল।

তানজিম হাসান ও পারভেজের ব্যাটে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল দারুণ। বাজে বল কাজে লাগিয়ে দ্রুত রান তোলেন দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।

বিষ্ণুইকে ছক্কা হাঁকানোর পর একই চেষ্টা করতে গিয়ে তানজিদের বিদায় দিয়ে শুরু বাংলাদেশের দিক হারানোর। লেগ স্পিনারের ছোবলে বিনা উইকেটে ৫০ থেকে ৬৫ পর্যন্ত যেতে চার উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ।

একের পর এক গুগলিতে মাহমুদুল হাসান, তৌহিদ হৃদয়কে ফিরিয়ে দেন বিষ্ণুই। স্টাম্পড হয়ে ফিরেন শাহাদাত। কেউ যেতে পারেননি দুই অঙ্কে। ক্র্যাম্পের জন্য দলীয় ৬২ রানে মাঠ ছাড়েন পারভেজ।

অধিনায়কের সঙ্গে জমে উঠছিল একটা জুটি। বাজে এক শটে শামীম হোসেন ফিরে গেলে বিপদ আরও বাড়ে বাংলাদেশের। এক ওভারে দুইবার জীবন পাওয়ার পর সেই ওভারেই ফিরেন অভিষেক।

১০২ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশকে কক্ষপথে ফেরান পারভেজ ও আকবর। খুঁড়িয়ে খুড়িয়ে অধিনায়ককে সঙ্গ দেওয়া পারভেজ খেলে দেন বিপজ্জনক বিষ্ণুইয়ের দুটি ওভার।

অনিয়িমিত লেগ স্পিনার জয়সাওয়ালের বলে পারভেজ ক্যাচ দিলে ভাঙে ৪১ রানের জুটি। ৭৯ বলে ৭ চারে ৪৭ রান করেন বাঁহাতি ওপেনার।

রকিবুলকে নিয়ে বাকি পথটুকু পাড়ি দেন আকবর। টুর্নামেন্টে এর আগে খুব একটা ব্যাটিংয়ের প্রয়োজন হয়নি অধিনায়কের। যখন প্রয়োজন হলো লড়াই করলেন বুক চিতিয়ে। হারের মুখ থেকে দলকে নিয়ে গেলেন বিজয়ের মঞ্চে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দল: ৪৭.২ ওভারে ১৭৭ (জয়সাওয়াল ৮৮, সাক্সেনা ২, ভার্মা ৩৮, গার্গ ৭, জুরেল ২২, বীর ০, আনকোলেকার ৩, বিষ্ণুই ২, সুশান্ত ৩, তিয়াগি ০, আকাশ ১*; শরিফুল ১০-১-৩১-২, তানজিম ৮.২-২-২৮-২, অভিষেক ৯-০-৪০-৩, শামীম ৬-০-৩৬-০, রকিবুল ১০-১-২৯-১, হৃদয় ৪-০-১২-০)

বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল: (লক্ষ্য ৪৬ ওভারে ১৭০) ৪২.১ ওভারে ১৭০/৭ (পারভেজ ৪৭, তানজিদ ১৭, মাহমুদুল ৮, হৃদয় ০, শাহাদাত ১, আকবর ৪৩*, শামীম ৭, অভিষেক ৫, রকিবুল ৯*; কার্তিক ১০-২-৩৩-০, সুশান্ত ৭-০-২৫-২, আকাশ ৮-১-৩৩-০, বিষ্ণুই ১০-৩-৩০-৪, আনকোলেকার ৪.১-০-২২-০, জয়সওয়াল ৩-০-১৫-১)

ফল: ডাকওয়ার্থ ও লুইস পদ্ধতিতে বাংলাদেশ ৩ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: আকবর আলী