চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন। চট্টগ্রাম-৯ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। দল তাকে মনোনয়নও দিয়েছে।চট্টগ্রামের রাজনীতিতে ডা. শাহাদাতের পরিচিতি একজন সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে। একজন স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মানুষ হিসেবে জনগণের কাছে তার বেশ গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
চিকিৎসা তার পেশা। তবে এখন রাজনীতিতেই বেশি সময় দেন। রাজনীতিই তার নেশা ও পেশা।
ডা. শাহাদাতকে গত ৭ নভেম্বর ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি ঢাকায় এসেছিলেন দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে।
প্রথমে তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, পরে কাশিমপুর কারাগারে রাখা হয় এবং বর্তমানে তার ঠিকানা চট্টগ্রাম কারাগার। জেল থেকেই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
এমতাবস্থায় জেলে বসে ডা. শাহাদাত হোসেন নিজ নির্বাচনী এলাকার জনগণের উদ্দেশে একটি চিঠি লিখেছেন। চিঠিটি বেশ আবেগঘন। এটি তার নির্বাচনী এলাকার মানুষের মনে দাগ কেটেছে বলে জানা গেছে।
চিঠিটি ৭ পৃষ্ঠার। এতে তার গ্রেফতারের ঘটনা, জীবনের নানা সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং নির্বাচনে বিজয়ী করার আহ্বান উঠে এসেছে।
ডা. শাহাদাত হোসেন তার একান্ত সচিব মারুফুল হক চৌধুরীর মাধ্যমে এ চিঠি দিয়েছেন। চিঠির শিরোনাম- ‘আমি জেল থেকে বলছি’।
আলোচিত এ চিঠির ফটোকপি চট্টগ্রামসহ ঢাকার গণমাধ্যমগুলোর হাতে এসে পৌঁছেছে। চিঠির স্ক্যান কপিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে।
চিঠিটি ঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হল-
চিঠিতে ডা. শাহাদাত হোসেন লেখেন-‘আমি ডা. শাহাদাত হোসেন (বাকলিয়া-কোতোয়ালি-চকবাজার) চট্টগ্রাম-৯ সংসদীয় আসনের প্রার্থী। চট্টগ্রাম কারাগারের নির্জন সেল থেকে আপনাদের কাছে আমি আমার কিছু কথা তুলে ধরছি।’
‘গত ৭ নভেম্বর ঢাকায় গ্রেফতার চট্টগ্রাম মহানগরীর কিছু নেতাকর্মীকে ঢাকার সিএমএম কোর্টে দেখতে গেলে ডিবি (গোয়েন্দা পুলিশ) পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করে। পরে ঢাকার মিন্টো রোডে গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে যায়।
এমন একটি সময়ে আমাকে গ্রেফতার করা হল যখন বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট আওয়ামী লীগ মহাজোটের সঙ্গে ঐতিহাসিক সংলাপ শেষে ওবায়দুল কাদের (আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক) সাহেব ঘোষণা করলেন বিরোধী দলের আর কোনো নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হবে না।
কারও বিরুদ্ধে কোনো গায়েবি মিথ্যা মামলা দেয়া হবে না। অথচ এর ঠিক দুই ঘণ্টার মধ্যে ৭ নভেম্বর বিকাল ৪টায় আমাকে গ্রেফতার করা হয় বিনা পরোয়ানায়।
ডিবি অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমাকে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আমি জিজ্ঞেস করলাম আমাকে কেন গ্রেফতার করা হল? আমার অপরাধ কী?
উত্তরে বলা হল-আপনি নির্বাচন করবেন এটিই আপনার অপরাধ। আপনি জনপ্রিয় এটিই আপনার অপরাধ।
এর পর ৫৪ ধারায় একটি মামলা দেখিয়ে ঢাকার কেরানীগঞ্জ কারাগারে একদিন ও কাশিমপুর কারাগারে প্রায় ১৫ দিন রেখে চট্টগ্রাম কারাগারে আমাকে পাঠানো হয়।
ইতিমধ্যে আমি ঢাকা থাকাবস্থায়ই চট্টগ্রামে আমার বিরুদ্ধে ১০টি গায়েবি মামলা করা হয়। ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম কোর্টে আমাকে হাজির করা হয়।
আমার জামিন নামঞ্জুর হয়। আমাকে কোর্ট থেকে কারাগারে ডিভিশনের আদেশ দিলেও যথারীতি আমাকে নির্জন সেলে রাখা হয়। যেখানে ফাঁসির আসামিরা থাকে।
চট্টগ্রাম কারাগারে আসার পর গত ১০ দিনেও আমার মায়ের সঙ্গে এখনও পর্যন্ত দেখা করতে দেয়া হয়নি। মিথ্যা গায়েবি মামলায় হাজার হাজার বিএনপি নেতাকর্মীকে কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে।
দেশে আজ দুর্নীতি, দুঃশাসন ও গণতন্ত্রের নামে স্বৈরতন্ত্র চলছে। গুম, গুপ্তহত্যা, নির্যাতন, মামলা, হামলা ও বিচারবহির্ভূত হত্যার মাধ্যমে বিরোধী দল ও মতকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত সরকার।
গত ১০ মাস ধরে তিন বারের প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে।
এমতাবস্থায় বাকলিয়া-কোতোয়ালি-চকবাজারসহ ৯ সংসদীয় আসনের সর্বস্তরের জনসাধারণের কাছে একান্ত অনুরোধ-গত ৩২ বছরের রাজনৈতিক জীবনে একজন রাজনীতিবিদ, পাশাপাশি একজন চিকিৎসক হিসেবে আপনাদের সুখ-দুঃখের সঙ্গী হওয়ার চেষ্টা করেছি।
ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিয়ে, কখনও অগ্নিদুর্গত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে, বন্যাদুর্গত এলাকায় কিংবা পাহাড়ধসে অসহায় পরিবারদের পাশে দাঁড়িয়েছি।
বারবার রাজপথে আন্দোলন করেছি, আপনাদের যৌক্তিক হোল্ডিং ট্যাক্স কমানোর দাবি নিয়ে কিংবা বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস সরবরাহের দাবি নিয়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে কিংবা জলবদ্ধতা নিরসনের দাবি নিয়ে।
আজকে যারা আমাকে কিছু গায়েবি মামলা দিয়ে কারাগারে বন্দি রেখে খোলা মাঠে গোল দিতে চায়, হয়তোবা দেখা যাবে এরা এ সংসদীয় আসনের ভোটারও না।
তাদের এ অমানবিকতার বিরুদ্ধে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপনারা একজন নিজেকে বেগম খালেদা জিয়া কিংবা ডা. শাহাদাত হোসেন মনে করে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দুর্নীতিমুক্ত সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হউন।
ডা. শাহাদাত চিঠির শেষ পর্যায়ের তার স্বপ্নের বাংলাদেশের রূপকল্প তুলে ধরেন। লিখেন- আমি এমন দেশ চাই ‘যে বাংলাদেশ হবে নিরাপদ, যেখানে আমার ছাত্রছাত্রী ভাইবোনদের যৌক্তিক কোটা সংস্কারের দাবি পূরণ হবে, ৪ কোটি বেকার তাদের কর্মসংস্থানের উপায় খুঁজে পাবে, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা পাবে, মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা ও সাম্য-মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পাবে।’
নিজ নির্বাচনী এলাকার জনগণের উদ্দেশে ডা. শাহাদাত হোসেন ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট দিয়ে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা ও তাকে জয়ী করার আহ্বান জানান।
লিখেন-‘৯ সংসদীয় আসনের সংগ্রামী এলাকাবাসী, আপনাদের প্রতি দেশের এই চরম ক্রান্তিকালে অনুরোধ থাকবে, আগামী ৩০ ডিসেম্বর আপনারা আপনাদের সাংবিধানিক অধিকার, ভোটের অধিকার, নিজ নিজ ভোট সেন্টারে গিয়ে প্রতিষ্ঠা করুন।
ধানের শীষ প্রতীকে আপনার একটি মূল্যবান ভোট অন্ধকার কারাগারে থেকে আমাদের দেশমাতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবে। আমিসহ হাজার হাজার নেতাকর্মী গায়েবি মামলার শিকার হয়ে অন্যায়ভাবে কারাগারে বন্দি আছি- তাদের মুক্তির পথ দেখাবে।
আল্লাহ আমাদের সহায় হোক। ইনশাআল্লাহ বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত। গণতন্ত্র মুক্তি পাক, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।
ডা. শাহাদাতের এই চিঠি এখন চট্টগ্রামবাসীর মুখে মুখে। এটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল।
আপনার মতামত লিখুন :