খুলনা-কলকাতা বিরতিহীন ‘বন্ধন এক্সপ্রেস’ উদ্বোধন


F.Taj প্রকাশের সময় : নভেম্বর ৯, ২০১৭, ১:৩৬ PM / ৩৯
খুলনা-কলকাতা বিরতিহীন ‘বন্ধন এক্সপ্রেস’ উদ্বোধন

খুলনা-কলকাতা যাত্রীবাহী ট্রেন মৈত্রী এক্সপ্রেস-২ (বন্ধন এক্সপ্রেস) এর বিরতিহীন সার্ভিসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে।বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে ঢাকা ও নয়াদিল্লি থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে এ ট্রেনের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ সময় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও যুক্ত হন তাদের সঙ্গে।

এছাড়া একই সঙ্গে উদ্বোধন হয়েছে দ্বিতীয় ভৈরব তিতাস রেলসেতু। পাশাপাশি ঢাকা-কলকাতা রুটের মৈত্রী এক্সপ্রেসের জন্য উভয়প্রান্তে বহির্গমন ও কাস্টমস কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন দুই প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্য দিয়ে প্রায় ৫২ বছর পর খুলনা-কলকাতা রুটে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন সার্ভিস চালু হলো। ১৬ নভেম্বর থেকে যাত্রী নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে এ ট্রেন চলাচল শুরু হবে। ‘বন্ধন’ সকাল সাড়ে ৭টায় কলকাতা থেকে ছেড়ে দুপুর সাড়ে ১২টায় খুলনা পৌঁছাবে। বেলা ২টায় আবার কলকাতার উদ্দেশে খুলনা ছেড়ে যাবে।

বন্ধন এক্সপ্রেসের উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক দুদেশকে ছাড়িয়ে আঞ্চলিক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এ সম্পর্ক অন্যদের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। দক্ষিণ এশিয়ায় একটি শান্তিপূর্ণ অঞ্চল গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমরা ভারত এবং অন্যান্য নিকট প্রতিবেশীর সঙ্গে সহযোগিতা করতে চাই। যেখানে আমরা সুপ্রতিবেশী হিসেবে পাশাপাশি বসবাস এবং জনগণের কল্যাণের জন্য গঠনমূলক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারি।

এ সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নে ভুমিকা রাখতে চায় ভারত। রেল যোগাযোগের মাধ্যমে দুদেশের মানুষের যাতায়াতের ভোগান্তি কমবে। বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ আরো দৃঢ় করতে কলকাতাকে সেতুবন্ধন হিসেবে ব্যবহার করা হবে। প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে মানুষে মানুষে যোগাযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত সাক্ষাৎ ও আলাপ আলোচনার ওপরও জোর দেন তিনি।

ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ভৈরব ও তিতাসের পুরনো সেতু দুটি নির্মাণ করা হয়েছিল ১৯৩৭ সালে। ভারতীয় ঋণে সেখানে নতুন দুটি সেতু হওয়ায় ডাবল লাইনে ক্রসিং ছাড়াই ট্রেন চলাচল করতে পারবে। এতে যাতায়াতের সময় ১৫ মিনিট কমে আসবে বলে জানান প্রকল্প কর্মকর্তারা।

এ দুটি সেতু প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে এক হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে মধ্যে ৮২৬ কোটি ২০ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে ভারত। আশুগঞ্জ ও ভৈরবে মেঘনা নদীর ওপর ডুয়েল গেজ রেলসেতুর দৈর্ঘ্য ৯৮২ দশমিক ২ মিটার। আর দ্বিতীয় তিতাস রেলসেতুর দীর্ঘ ২১৮ মিটার।

বাংলাদেশ রেলওয়ের উপমহাপরিচালক (অপারেশন) মো. হাবিবুর রহমান বলেন, খুলনা অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার পর খুলনা-কলকাতা থেকে যাত্রীবাহী লাল-সবুজ ট্রেনের চলাচল আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হলো। গত ৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদী এই ট্রেনের পরীক্ষামূলক উদ্বোধন করেন।

তিনি বলেন, দ্বিতীয় মৈত্রী এক্সপ্রেস নামে এই ট্রেন সার্ভিস চালুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে রেল যোগাযোগ বৃদ্ধিসহ আন্তর্জাতিক ট্রান্স-এশিয়ান রেলরুটে অন্তর্ভুক্ত হলো বাংলাদেশ। এতে রেলপথে পণ্য আমদানি-রপ্তানির সুবিধাসহ যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বৃদ্ধি পাবে।

হাবিবুর রহমান বলেন, খুলনা-কলকাতা ট্রেন সার্ভিস আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পাশাপাশি শুক্রবার ঢাকা-কলকাতার মধ্যে চলাচলকারী মৈত্রী ট্রেনের ওয়ানস্টপ সার্ভিসও উদ্বোধন করা হবে। ফলে ১০ নভেম্বর থেকে ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন যাত্রীদের ইমিগ্রেশন, কাস্টমসসহ যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন হবে যাত্রা স্টেশনেই। এ ক্ষেত্রে যারা কলকাতা যাবেন তাদের ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন এবং কলকাতা থেকে যারা বাংলাদেশে আসবেন তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা কলকাতা স্টেশনেই সম্পন্ন করা হবে।

তিনি বলেন, এই সার্ভিস চালু হলে ঢাকা ও কলকাতার দুই প্রান্তে শুরুতেই ইমিগ্রেশন, কাস্টমসসহ অন্যান্য দাপ্তরিক কাজ সেরে নেওয়া হবে। ফলে মৈত্রী এক্সপ্রেসের মধ্যপথে আর কোথাও বিরতির প্রয়োজন হবে না। ট্রেনটি ননস্টপ চলাচল করবে।

এখন এই ট্রেনের যাত্রীদের বাংলাদেশের দর্শনা ও ভারতের গেদে স্টেশনে ইমিগ্রেশন কাজ সারতে হয়। এ সময় যাত্রীদের সকল মালামাল নিয়ে ট্রেন থেকে নেমে কাস্টমসের আনুষ্ঠানিকতা সেরে আবারো মালামাল নিয়ে ট্রেনে উঠতে হয়। ইমিগ্রেশনের কাজ সারতে মাঝপথে প্রায় ৩ ঘণ্ট্ াসময় চলে যায়। বিষয়টি অনেক সময় যাত্রীদের জন্য বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

 

দুই বন্ধু প্রতীম দেশের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সহযোগিতার সম্প্রসারণে দীর্ঘ ৪৩ বছর পর ২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল মৈত্রী ট্রেনের মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারত রেল যোগাযোগ শুরু হয়। বৃহস্পতিবার ছাড়া ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা রুটে এখন সপ্তাহে ছয় দিন মৈত্রী এক্সপ্রেস চলাচল করে। এটি এখন সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। ভাড়া ভ্রমণ করসহ ১৬৩৩ টাকা। প্রাপ্ত বয়স্কদের সঙ্গে পাঁচ বছরের নিচের বয়সের শিশুদের ৫০ শতাংশ কম ভাড়ায় যাতায়াত করতে পারে।