মধ্যপ্রাচ্যের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সৌদি আরব আর ইরানের দ্বন্দ্ব বেশ পুরনো। অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের পাশাপাশি একাধিক রণক্ষেত্রে দুটি দেশই এখন প্রক্সি যুদ্ধে লড়ছে। তবে সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় দেশ দুটির মধ্যে যুদ্ধ উত্তেজনা বেড়েছে। আশঙ্কা জেগেছে- তাহলে কি মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিশালী দুটি দেশ এবার সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে যাবে? সৌদি আরব আর ইরানের মধ্যে দ্বন্দ্বের উৎস কার্যত ধর্মীয় বিশ্বাসগত। সুন্নি-শিয়া বিশ্বাসের এই দ্বন্দ্ব রাজনীতিতে গড়িয়েছে। সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ সিরিয়ায় আলাবি শিয়া বাশার আল-আসাদের নিয়ন্ত্রন আর শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ বাহারাইনের সুন্নি নিয়ন্ত্রন নিয়ে দুদেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে।
.
ইরাক ও ইয়েমেন নিয়েও একই দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে সৌদি রাজতন্ত্র ও ইরানের ইসলামিক রিপাবলিক। সিরিয়ায় দুপক্ষই প্রক্সি যুদ্ধে জড়িয়েছে। আর ইয়েমেনে শিয়া হুথি গোষ্ঠীর জোরপূর্বক ক্ষমতা দখলের বিরুদ্ধে সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপ করে সৌদি জোট।
সৌদি আরব দেশটির শিয়া সম্প্রদায়ের শীর্ষস্থানীয় নেতা শেখ নিমর আল নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে। প্রতিবাদে ২০১৬ সালের ৩ জানুয়ারি তেহরানে সৌদি দূতাবাসে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এনিয়ে দুদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক বন্ধ হয়ে যায়।
এতোদিন প্রক্সি যুদ্ধ করে আসলেও সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে সৌদি আরবের ডি-ফ্যাক্টো শাসক যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এবং দেশটির এক মন্ত্রীর কথায় এমনই ইঙ্গিত মিলে।
রোববার ইয়েমেনের হুথি যোদ্ধাদের নিক্ষিপ্ত একটি ক্ষেপণাস্ত্র সৌদি প্রতিরক্ষা বাহিনী দেশটির রাজধানী রিয়াদের বিমানবন্দরের কাছে আকাশেই ধ্বংস (ইন্টারসেপ্ট) করে দেয়। এর আগেও হুথি যোদ্ধারা সীমান্তবর্তী সৌদি আরবে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে।
এই ক্ষেপণাস্ত্র ইরানই হুথি বিদ্রোহীদের সরবরাহ করেছে দাবি করে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বলেন, ‘এটা সরাসরি সামরিক আগ্রাসন। সৌদি আরবের বিরুদ্ধে যুদ্ধের শামিল।’তবে ইরান এ ধরনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, ‘সৌদি আরবের এ ধরনের অভিযোগ ক্ষতিকর, দায়িত্বজ্ঞানহীন, ধ্বংসাত্মক এবং উস্কানিমূলক। সৌদি আরবে চালানো এ হামলা ইয়েমেনে সৌদি আগ্রাসনেরই জবাব।’
এদিকে, ইরান সমর্থিত হেজবুল্লাহ কর্তৃক প্রাণনাশের আশঙ্কার কথা জানিয়ে সৌদি আরব সফররত লেবাবনের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি শনিবার পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তার ওপর সৌদি আরবের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
এঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করে সৌদি আরবের গাল্ফ অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রী থামের আল-সাবহান বলেন, হেজবুল্লাহর এই ‘আগ্রাসনের’ কারণে লেবানন সরকার সৌদির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে এমনটা ধরে নিয়েই কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়া হবে।
এছাড়া ইরানের সঙ্গ ছাড়তে বাধ্য করতে সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের কথিত অভিযোগ এনে ইতিমধ্যে কাতারের ওপর সর্বাত্মক অবরোধ আরোপ করে সৌদি জোট। এমনকি কাতারের বিরুদ্ধে তারা সামরিক পদক্ষেপ নিতে চেয়েছিল বলেও ইঙ্গিত দেন কুয়েতের আমির সাবাহ আল আহমেদ আল জাবের সাবাহ।
সৌদি আরবের ডি-ফ্যাক্টো শাসক যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এবং গাল্ফ অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রীর মুখে যুদ্ধের উন্মাদনা শোনা গেলে বাস্তবে সেটা হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ সামরিক শক্তির দিক থেকে ইরান মোটেই পিছিয়ে নেই। এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা সৌদি আরব থেকে অনেক এগিয়ে। যুক্তরাষ্ট্র আর ইসরাইলের সমর্থন নিয়ে সৌদি আরব সরাসরি যুদ্ধ জড়ালেও ইরানের পেছনে থাকা রাশিয়া ও চীনের বিষয়টি তাকে মাথায় রাখতে হবে। এক্ষেত্রে সৌদি আরবের জন্য সিরিয়া হতে পারে বড় শিক্ষা।
এছাড়া যেখানে এতোদিনেও ইয়েমেন যুদ্ধের চূড়ান্ত পরিণতি টানতে পারেননি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান, সেক্ষেত্রে তিনি ইরানের মতো শক্তিশালী দেশের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে জড়ানোর ভুল করবেন বলে মনে হয় না। তবে উচ্চাভিলাসী এই যুবরাজের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড বিবেচনায় নিলে এমন ধ্বংসাত্মক পদক্ষেপের বিষয়েও নিশ্চিত করে কিছু বলা যায় না।
আপনার মতামত লিখুন :