মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন ও সহিংসতা বন্ধে এবং মানবিক ত্রাণ সহায়তা করতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছে। জরুরি এক বৈঠকে দেশটির রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর অভিযান নিয়ে উদ্বেগ জানায় নিরাপত্তা পরিষদ। জাতিসংঘ সদরদপ্তর নিউইয়র্কে বুধবার এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। খবর রয়টার্সের।
চলতি মাসেই সাধারণ পরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে। তার আগেই ব্রিটেন এবং সুইডেনের ডাকা নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে এ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে নির্বিঘ্নে ত্রাণ কার্যক্রম চালানোর সুযোগ দিতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে সংস্থাটি।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর দেশটির সেনাবাহিনীর নিপীড়ন, নির্যাতন, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং তাদের বাংলাদেশে পালিয়ে আসায় সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার এক বিবৃতিতে বলা হয়, ১৫ সদস্যের এই কাউন্সিল মিয়ানমারের রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে অতিরিক্ত সহিংসতার খবরে উদ্বেগ জানিয়েছে। রাখাইনে সহিংসতা বন্ধে জরুরি পদক্ষেপ, পরিস্থিতির উত্তরণ, আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং বেসামরিক লোকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।
বৈঠকের পর জাতিসংঘে যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত ম্যাথিউ রাইক্রফট বলেন, গত নয় বছরের মধ্যে এই প্রথম মিয়ানমার নিয়ে বিবৃতিতে সম্মত হয়েছে নিরাপত্তা পরিষদ। যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন ও ফ্রান্স। এই দেশগুলোর প্রতিটির যে কোনো প্রস্তাব আটকে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।
এ বৈঠকে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী অং সান সু চির যোগদানের কথা থাকলেও পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। তার বদলে মিয়ানমার সরকারের প্রতিনিধি এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। ধারণা করা হয়, রোহিঙ্গা গণহত্যা নিয়ে তোপের মুখে পড়ার আশঙ্কায় সু চি এতে অংশগ্রহণ করেননি।
মিয়ানমারের রাখাইনে প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে চলমান সহিংসতা বন্ধে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে জাতিসংঘের এ সিদ্ধান্ত। শুরু থেকেই চীন, রাশিয়া ও ভারত মিয়ানমারের পাশে থাকলেও শেষ দিকে এসে বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপড়তায় নিমরাজি মনোভাব দেখায়। যার কারণে সাধারণ পরিষদের সকল সদস্যের সম্মতিতে এ সিদ্ধান্ত নিল জাতিসংঘ।
বৈঠকের আগে, রোহিঙ্গা মুসলিমরা মানবিক বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে জানিয়ে রাখাইনে সেনা অভিযান বন্ধ করতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকটে মানবিক পরিস্থিতি বিপর্যয়কর অবস্থায় পৌঁছেছে। রোহিঙ্গা গ্রামবাসীদের উপর নিরাপত্তা বাহিনীর হামলা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।’
এছাড়াও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সাধ্যমত যেকোনো মানবিক সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান তিনি।
উল্লেখ্য, এবারের সহিংসতায় ইতিমধ্যে ৩ লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের আশ্রয় শিবিরে। এর আগে এখানে আরও ৫ লাখ রোহিঙ্গা বাস করছে, যাদেরকে ফেরত নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে মিয়ানমার।
আপনার মতামত লিখুন :