রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্র আসলাম হোসেন ওরফে র্যাশ ওরফে হাররা ওরফে রাশেদ বহন করে ঢাকায় নিয়ে আসে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে তিনি অস্ত্রগুলো নিয়ে এসেছিল। এরপর কল্যাণপুরের জাহাজ বাড়িতে এ অস্ত্র নিয়ে তিনি উঠেছিলেন বলে জানিয়েছেন কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম।
তিনি জানান, অস্ত্রগুলোর মধ্যে ৪টি নাইন এমএম পিস্তল ও ৮টি ম্যাগজিন ছিল। একটি পিস্তল রাশেদ তার কোমরে করে নিয়ে এসেছিল। বাকি অস্ত্র ফলের ঝুড়িতে করে নিয়ে আসে। রাশেদ নিহত জঙ্গি জেএমবির সমন্বয়ক তামিম চৌধুরীর খুব বিশ্বস্ত হওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে অস্ত্র আনার দায়িত্ব তার ওপর ছিল। তারপর কল্যাণপুর থেকে সেই অস্ত্র বাশারুজ্জামান চকলেট বসুন্ধরার বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে পুলিশ এবং র্যাশ ওরফে রাশেদ তা স্বীকার করেছে।
মনিরুল ইসলাম আরো জানান, কাজের দক্ষতার বিচার বিশ্লেষণ করে রাশেদকে বড় পদে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল তামিম। কিন্তু তামিম জঙ্গি বিরোধী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত হওয়ায় তার আর বড় পদে যাওয়া হয়নি। তখন মাইনুল ইসলাম মুসা নব্য জেমবির আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিল। মুসার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তাদের সঙ্গে রাশেদের দূরত্ব বেড়ে যায়। রাশেদের মন অনেকদিন খারাপ থাকার পর সংগঠনের পুরাতন সদস্য ও নতুনদের নিয়ে দল গোছানোর চেষ্টা করে বলেও জানান মনিরুল ইসলাম।
জঙ্গি রাশেদের বরাত দিয়ে মনিরুল ইসলাম আরো জানান, নিহত জঙ্গি তানভীর কাদেরকেও আজিমপুরের বাসায় পৌঁছে দিয়েছিল রাশেদ। শুধু তাই নয়; বসুন্ধরার বাসায় ফার্নিচার ক্রয় করে রাশেদ ও আকিকুজ্জামান (মোনায়েম খানের নাতি) পৌঁছানোর কাজেও সম্পৃক্ত ছিল তারা।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম জানান, হলি আর্টিজান হামলায় অংশগ্রহণের জন্য রাশেদকেও রাখা হয়েছিল কিন্তু প্রধান সমন্বয়ক রাশেদকে অন্য অপারেশনের কাজে নিয়োজিত করবে বলে শেষ মুহূর্তে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের জঙ্গি আস্তানায়ও রাশেদের আসা যাওয়া ছিল বলেও জানান তিনি।
গাজীপুরের দুটি বাড়িতে অভিযানের পরপরই রাশেদ আবার উত্তরবঙ্গে আত্মগোপন করেছিল। রাশেদকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে হলি আর্টিজান হামলার তদন্ত কাজ একেবারেই শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
দেশে আর বড় ধরনের কোনো নাশকতা করার সক্ষমতা জেএমবির নেই বলেও জানান মনিরুল ইসলাম।
গুলশান হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী নব্য জেএমবির রাশেদকে শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টায় নাটোরের সিংড়া থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
গত বছরের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় দেশের ইতিহাসের ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ দেশি-বিদেশি ২২ নাগরিক প্রাণ হারান। নিহতদের মধ্যে একজন ভারতীয়, ৯ জন ইতালীয়, সাতজন জাপানি নাগরিক এবং বাকিরা বাংলাদেশি। প্রায় ১২ ঘণ্টার ওই ‘জিম্মি সংকট’ শেষ হয় সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযান ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ দিয়ে।
অভিযানে পাঁচ জঙ্গি ও রেস্টুরেন্টের বাবুর্চি সাইফুল ইসলাম চৌকিদার নিহত হন। নিহত জঙ্গিরা হলেন- নিবরাস ইসলাম, মীর সামিহ মোবাশ্বের, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও শফিকুল ইসলাম উজ্জল ওরফে বিকাশ।
আপনার মতামত লিখুন :