পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে প্রশ্নপত্র প্রণয়নের পুরো প্রক্রিয়াটাকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। প্রশ্নপত্র প্রণয়নে সর্বনিম্ন জনবল ব্যবহার করে এ প্রক্রিয়া শেষ করতে চাইছে সরকার। প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রশ্নপত্র প্রণয়নের পুরো প্রক্রিয়া অটোমেশন করা হবে।
এ লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় উচ্চ পর্যায়ের চারটি পৃথক কমিটি গঠন করেছে। বিভিন্ন পর্যায়ের ৩৮ শিক্ষক ও কর্মকর্তা সেখানে কাজ করবেন। এর মধ্যে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও এর ব্যবস্থাপনা নিয়ে সুপারিশ করার জন্য করা হয়েছে তিনটি উপকমিটি। তাদের সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য করা হয়েছে আলাদা একটি মূল কমিটি।
গত বুধবার সচিবালয়ে সুচারুরূপে পাবলিক পরীক্ষা সম্পন্নের বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়নে করণীয় নির্ধারণের লক্ষ্যে এক বৈঠকে এসব কমিটি গঠন করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পৃথক দুই বিভাগের সচিবসহ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তারা এ সভায় অংশ নেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইনকে আহ্বায়ক করে গঠিত এসংক্রান্ত মূল কমিটিতে রয়েছেন ১৬ জন। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীরকে করা হয়েছে যুগ্ম আহ্বায়ক। এ ছাড়া বুয়েটের শিক্ষক অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ, মন্ত্রিপরিষদ ও জনপ্রশাসন বিভাগের একজন সদস্য (অতিরিক্ত সচিব পদ মর্যাদার), প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্প, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিট বেডু, মাউশি, কম্পিউটার কাউন্সিল, ঢাকা, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ ১২ জনকে রাখা হয়েছে সদস্য হিসেবে। এ কমিটি প্রশ্নপত্র মুদ্রণসংক্রান্ত বিভিন্ন উপকমিটির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করবে। এ ছাড়া প্রশ্নপত্রের কারিগরি গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কারিগরি বিষয়গুলোর সুপারিশ করবে, টেকনোলজি ব্যবহারের সম্ভাবনা খুঁজে বের করবে, প্রশ্ন প্রণয়ন ও গ্রহণ উভয় জায়গায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বিধানের সুপারিশ করবে। এ ছাড়া সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা নিতে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের বক্তব্য ও মতামত জানবে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি শিক্ষা বোর্ডের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের দিয়ে প্রতিটি বিষয়ে শত শত সেট মানসম্পন্ন প্রশ্নপত্র তৈরি করে রাখা হবে। সেগুলো দিয়ে একটি প্রশ্নব্যাংক তৈরি করা হবে। ছাত্রছাত্রীরা যাতে মূল পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নের মান ও ধরন বুঝতে পারে, সেজন্য কয়েকশ প্রশ্ন নমুনা হিসেবে শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইটে রাখা হবে। বাকি প্রশ্নগুলো গোপনে সংরক্ষণ করা হবে এবং সেখান থেকে কম্পিউটারে লটারির মাধ্যমে র্যানডম সিলেকশন পদ্ধতিতে নির্বাচন করে মূল প্রশ্নপত্র তৈরি করা হবে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘পরীক্ষার দিন সকালে এভাবে যন্ত্রের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র তৈরি করে তাৎক্ষণিকভাবে ই মেইল করে পাঠানো হবে। কেন্দ্রগুলোতে পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিট আগে তা প্রিন্ট করে পরীক্ষার কক্ষে সরবরাহ করলে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঝুঁকি অনেক কমে আসবে।’
তিনি বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে পাবলিক পরীক্ষা সুষ্ঠু ও মানসম্মত করতে কঠোর ব্যবস্থা নিতে আমরা বাধ্য হয়েছি। যারা এ ধরনের গর্হিত কাজে জড়িত হবেন, তাদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :