গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও নব্য জেএমবির উত্তরাঞ্চলীয় কমান্ডার সোহেল মাহফুজকে তিন সহযোগীসহ চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার রাতে উপজেলার পুসকনী এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) টিএম মুজাহিদুল ইসলাম। পুরনো জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইয়ের আমলে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়া সোহেল মাহফুজকেকে দীর্ঘদিন ধরেই খুঁজছিল পুলিশ।
হলি আর্টিজানে হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেডগুলো তিনিই সরবরাহ করেছিলেন বলে পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, হলি আর্টিজানে হামলার পরিকল্পনা ও এটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ, রাশেদ ওরফে র্যাশ ও বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেটের বড় ধরনের ভূমিকা ছিল। তাই আলোচিত ওই মামলার তদন্তকাজ শেষ করতে হলে এই তিনজনকে গ্রেফতার করা জরুরি হয়ে পড়েছিল।
এদের মধ্যে সোহেলকে গ্রেফতার সম্ভব হলেও এখনো বাকি রয়েছেন রাশেদ ও বাশারুজ্জামান।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) টিএম মুজাহিদুল ইসলাম শনিবার সকালে সাংবাদিকদের জানান, গোপন সংবাদে শুক্রবার রাতে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও নব্য জেএমবির উত্তরাঞ্চলীয় কমান্ডার সোহেল মাহফুজসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতার অন্যরা হলেন, জেএমবির আইসিটি এক্সপার্ট হাফিজ, সামরিক শাখার সদস্য জামাল ও জেএমবি সদস্য জুয়েল।
তিনি আরো জানান, সোহেল মাহফুজ যেহেতু গুলশান হামলার সঙ্গে জড়িত, তাই তাকে ঢাকায় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কাছে পাঠানো হয়েছে। বাকি তিনজন চাঁপাইনবাবগঞ্জের একাধিক মামলার আসামি হওয়ায় তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হবে।
গত ১ জুলাই গুলশান হামলার এক বছর পূর্ণ হয়। তখন মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে তদন্ত সংস্থা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্র্যান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, মামলাটির তদন্ত করতে গিয়ে আমরা গত এক বছরে অনেকগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। ওই ঘটনায় সরাসরি যারা জড়িত ছিলেন অর্থাৎ যারা হামলা করেছিলেন তারা সবাই ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। এর বাইরে ওই ঘটনার পরিকল্পনা, সহযোগিতা করা বা নানাভাবে ভূমিকা রেখেছে এ রকম অনেককে আমরা চিহ্নিত করেছিলাম। তাদের মধ্যে হলি আর্টিজানে হামলায় জড়িত ছিল এ রকম আটজন গত এক বছরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত হয়েছেন।
তিনি বলেন, মামলাটিতে গ্রেফতার করা হয়েছে চারজনকে, যাদের মধ্যে তিনজন নিজেদের সম্পৃক্ততা উল্লেখ করে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। আর আমরা এখনো পাঁচজনকে খুঁজছি, তদন্তে তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। ওই পাঁচজনের মধ্যে তিনজন এই মামলার তদন্তের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ আসামি। তাদের খুব বড় ধরনের ভূমিকা ছিল হামলার পরিকল্পনা ও এটির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে। তারা হলেন, সোহেল মাহফুজ, রাশেদ ওরফে র্যাশ এবং বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট। তাদের ধরতে পারলেই তদন্তকাজ শেষ করতে পারব।
উল্লেখ্য, গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহে আদালতে নেয়ার পথে তিন জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন সোহেল মাহফুজ। পুরনো জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইয়ের আমলে জঙ্গিবাদে জড়ান তিনি। পরে জেএমবির শীর্ষ ৬ জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর হলে সংগঠনটির আমির হন সাইদুর রহমান। ওই সময় জেএমবির শুরা (নীতি নির্ধারণী) কমিটির সদস্যপদ পান মাহফুজ। ২০১০ সালের দিকে সাইদুর রহমান গ্রেফতার হন। এরপর দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থেকে উত্তরাঞ্চলে জেএমবিকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন মাহফুজ নারায়ণগঞ্জে নিহত নব্য জেএমবির সমন্বয়ক ও গুলশান হামলার মূল পরিকল্পনাকারী তামিম আহমেদ চৌধুরীর সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল মাহফুজের। পরে তিনি নব্য জেএমবিতে যুক্ত হন। এরপর থেকে তিনি নব্য জেএমবির অস্ত্র কেনা, গ্রেনেড তৈরি এবং সরবরাহসহ আইটি শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
গোয়েন্দা সূত্র আরো জানায়, বোমা তৈরি করতে গিয়ে সোহেল মাহফুজের বাঁ হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তবে তিনি এক হাত দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র চালাতে দক্ষ। ছাত্রজীবনে সোহেল মাহফুজ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সক্রিয় সদস্য ছিলেন।
আপনার মতামত লিখুন :