সাফাতরা অস্ত্র ফ্রন্ট ডেস্কে জমা দিয়ে হোটেলে ঢুকেছিল


Sharif Khan প্রকাশের সময় : মে ১৩, ২০১৭, ১২:৪৯ PM / ৪৮
সাফাতরা অস্ত্র ফ্রন্ট ডেস্কে জমা দিয়ে হোটেলে ঢুকেছিল

সাফাতরা অস্ত্র ফ্রন্ট ডেস্কে জমা দিয়ে হোটেলে ঢুকেছিল, বনানীতে দুই তরুণী ধর্ষণের ঘটনার দিন সাফাত আহমেদ তার বন্ধুদের নিয়ে ফ্রন্ট ডেস্কে অস্ত্র জমা দিয়েই রেইন ট্রিতে ঢুকেছিল বলে দাবি করছে হোটেলটির কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, ২৮ মার্চ ঘটনাটি ঘটলেও হোটেলটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হয় ৯ এপ্রিল। ওইদিন হোটেলের আর্চওয়ে কানেক্টেড না থাকায় আসামিরা মদ নিয়ে হোটেলে ঢুকেছিল কিনা, তা বলতে পারছে না হোটেল কর্তৃপক্ষ।

শনিবার দুপুরে হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার ও ইন্টার্নাল অপারেশন এক্সিকিউটিভ ফারজান আরা রিমি এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। এদিন সকালে মানবাধিকার কমিশন ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর হোটেলে অভিযান চালানোর পর তারা এই ব্রিফিং করেন।

ব্রিফিংয়ে ফারজান আরা রিমি বলেন, ‘অভিযানে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও মানবাধিকার কমিশন অস্বাভাবিক কিছু পায়নি।’ ঘটনার দিনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সেদিন (২৮ মার্চ) অস্ত্র ফ্রন্ট ডেস্কে জমা দিয়ে হোটেলে প্রবেশ করেছিল সাফাত, সাদমান, নাঈমরা। ফলে ধর্ষণের শিকার দুই তরুণী অস্ত্রের মুখে ধর্ষণের যে অভিযোগ করেছেন, তা মিথ্যা।’ রিমি আরও বলেন, ‘এই হোটেলের প্রতিটি রুম সাউন্ডপ্রুফ। ফলে রুমের মধ্যে কেউ চিৎকার করলেও তো বাইরে থেকে শোনার উপায় নেই।’ ২৮ মার্চ ওই দুই তরুণী ধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও হোটেলটি ৯ এপ্রিল চালু হয়েছে বলে দাবি করেন রিমি ও ফ্র্যাংক ফরগেট।

রিমি আরও বলেন, ‘ওইদিন আমাদের আর্চওয়ে কানেক্টেড ছিল না। ফলে অভিযুক্ত আসামিরা মদ নিয়ে প্রবেশ করেছিল কিনা, সে বিষয়ে আমরা নিশ্চিত না।’ এর আগে হোটেল ব্যবস্থাপক ফ্রাঙ্ক ফরগেট সাংবাদিকদের জানান, হোটেল রেইন ট্রির মদের লাইসেন্স নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী হোটেলটিতে যে রাতে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন, সেই রাতে অস্বাভাবিক কিছু চোখে পড়েনি বলে মন্তব্য করেছেন ফ্রাঙ্ক ফরগেট। তিনি বলেন, ‘গত ২৮ মার্চ হোটেলটিতে ৫৮ জন স্টাফ কাজ করেছেন। আমরা তাদের সবাইকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তাদের কারো চোখে অস্বাভাবিক কিছু পড়েনি।’ ফরগেট আরো বলেন, ৩০ দিনের বেশি সময়ের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ জমা রাখা হয় না। কেন রাখা হয় না- জানতে চাইলে ফরগেট বলেন, ‘ইন্টারন্যাশনাল হোটেল ট্যুরিজমের নিয়ম অনুযায়ী আমরা ৩০ দিনের বেশি সময়ের ফুটেজ রাখি না।’

রেইন ট্রির ব্যবস্থাপক বলেন, ‘আজ হোটেলটিতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের একটি দল এসেছে। তারা সম্ভাব্য সন্দেহভাজন ঘটনাস্থল ঘুরে দেখছে। অন্যান্য অতিথিদের স্বার্থে আমরা সাংবাদিকদের ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছি না।’ ফরগেট জানান, হোটেলটির বারের কোনো লাইসেন্স নেই। এখানে কফি বার রয়েছে। মদের কোনো বার নেই।

জন্মদিনের পার্টিতে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ এনে গত ৬ মে বনানী থানায় মামলা করেন এক ছাত্রী। মামলার আসামিরা হলেন আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ, সাদমান সাকিফ, সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন ও দেহরক্ষী আবুল কালাম আজাদ। মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, গত ২৮ মার্চ রাত ৯টা থেকে পরের দিন সকাল ১০টা পর্যন্ত আসামিরা মামলার বাদী এবং তার বান্ধবী ও বন্ধু শাহরিয়ারকে আটক রাখেন। অস্ত্র দেখিয়ে ভয়-ভীতি প্রদর্শন এবং অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করেন। বাদী ও তাঁর বান্ধবীকে জোর করে ঘরে নিয়ে যান আসামিরা। বাদীকে সাফাত আহমেদ এবং বান্ধবীকে নাঈম আশরাফ একাধিকবার ধর্ষণ করেন।

গত বৃহস্পতিবার সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফকে সিলেট থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আদালত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাফাতকে ছয়দিন এবং সাকিফকে পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।