প্রধানমন্ত্রীর ‘একক ক্ষমতায়’ ভারসাম্য আনবে- সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া


Tajul প্রকাশের সময় : মে ১০, ২০১৭, ৬:৫৯ PM / ৬০
প্রধানমন্ত্রীর ‘একক ক্ষমতায়’ ভারসাম্য আনবে- সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া

প্রধানমন্ত্রীর একক নির্বাহী ক্ষমতা সংসদীয় সরকারের আবরণে স্বৈরাচারী একনায়কতান্ত্রিক শাসনের জন্ম দিয়েছে, দাবি করে সংবিধানে প্রয়োজনীয় সংশোধনীর মাধ্যমে প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতার ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনার আশ্বাস দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বুধবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে হোটেল ওয়েস্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভিশন-২০৩০ উপস্থাপন করার সময় তিনি এ কথা বলেন। বিকেল সাড়ে ৪টায় সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও খালেদা জিয়া অনুষ্ঠানস্থলে আসেন ৪টা ৫২ মিনিটে। বিদ্যমান সাংবিধানিক কাঠামোয় প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতা এককভাবে প্রধানমন্ত্রীর ওপর ন্যস্ত। এরূপ ব্যবস্থা সংসদীয় সরকার পদ্ধতির স্বীকৃত রীতির পরিপন্থী। সাম্প্রতিক বছরগুলোর অভিজ্ঞতায় দেশবাসী গভীরভাবে এটা উপলব্ধি করেছে। সংবিধানের এককেন্দ্রিক চরিত্র অক্ষুণ্ন রেখে বিদ্যমান সংসদীয় ব্যাবস্থা সংস্কারের অংশ হিসেবে জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা করার বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে বলেও জানান বিএনপি চেয়ারপারসন। সংবিধানে গণভোট ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করা হবে, জানিয়ে প্রাক্তন এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় সংসদকে সকল জাতীয় কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা হবে। জাতীয় স্বার্থ সম্পর্কিত বিষয়ে বিরোধীদলের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
কালা কানুন বাতিল হবে
খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি মানবিক মূল্যবোধ ও মানুষের মর্যাদায় বিশ্বাসী। অবশ্যই আইনের শাসনের নামে কোনো প্রকার কালা কানুন গ্রহণযোগ্য হবে না। বিএনপি সকল প্রকার কালা কানুন বাতিল করবে।
বিচার বিভাগকে ঢেলে সাজানোর প্রতিশ্রুতি
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিএনপি নেত্রী বলেন, অধস্তন আদালতকে নির্বাহী বিভাগের আওতামুক্ত করার লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টের অধীনে পৃথক সচিবালয় স্থাপন করা হবে।
দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ ও বিচারপ্রার্থীদের কাছে দায়বদ্ধ করার জন্য সমস্ত বিচার প্রশাসন ও বিচার প্রক্রিয়াকে পরিপূর্ণভাবে ইলেকট্রনিক/অনলাইন ব্যবস্থাপনায় রুপান্তর করা হবে বলেও জানান তিনি।
‘বর্তমানে থানায় গেলে পুলিশ মামলা নেয় না। এ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য দেশব্যাপী থানাগুলোতে অনলাইন পদ্ধতি ও মোবাইল টেকনোলজি ব্যবহারের মাধ্যমে অভিযোগ দায়েরের সুযোগ সৃষ্টি করে ফৌজদারি বিচার প্রার্থীদের আইনগত নিরাপত্তা পাওয়ার সম অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হবে,’ বলেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
প্রয়োজনীয় সংখ্যক যোগ্য বিচারক নিয়োগের মাধ্যামে মামলার জট কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, নিম্ন আদালতের বিচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও দ্রুত করতে জুরি ব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন করা হবে। গ্রাম আদালতকে সংস্কারের মাধ্যামে কার্যকর আদালতে রূপান্তর করা হবে।
বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের জুডিশিয়াল কমিশন গঠনের কথা জানান প্রাক্তন এই প্রধানমন্ত্রী।
পুলিশের আধুনিকায়ন হবে
বাংলাদেশ পুলিশকে দলীয় প্রভাবমুক্ত থেকে নিরেপক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর অনাকাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা হবে। পুলিশের ওপর বিচার বিভাগীয় তদারকির মাধ্যমে জবাবদিহি ও কল্যাণমূলক জনপ্রশাসন গড়ে তোলা হবে।
নিম্ন পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাদের আট ঘণ্টার বেশি দায়িত্ব পালনের জন্যর ওভার টাইম এবং ঝুঁকিপূর্ণ কাজের জন্য ঝুঁকিভাতা, আবাসন সমস্যায় সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের সঠিক তালিকা করবে বিএনপি
মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়নের নামে দুর্নীতি হয়েছে, অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, ক্ষমতায় গেলে বিএনপি মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের সঠিক তালিকা করবে।
রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের যে মুল্যায়ন করা হয় শহীদদের সেভাবে মুল্যায়ন করা হয় না, উল্লেখ করে বিএনপি প্রধান বলেন, বিএনপি রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে একটি সঠিক তালিকা প্রনয়ণ করবে এবং তাদের যথাযথ মর্যাদা ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান করবে। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ভাতা বৃদ্ধি করা হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের ‘রাষ্ট্রের সম্মানিত নাগরিক’হিসেবে ঘোষণা করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতাদের মধ্েয মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, তরিকুল ইসরাম, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাহবুবুর রহমান, এম কে আনোয়ার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ড. আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্েয চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, রুহুল আলম চৌধুরী, সেলিমা রহমান, শামসুজ্জামান দুদু, মোহাম্মদ শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, আবদুল মান্নান, খন্দকার মাহবুব হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, হারুন উর রশিদ ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উপদেষ্টাদের মধ্েয ছিলেন আমান উল্লাহ আমান, আতাউর রহমান ঢালী, ড. সুকোমল বড়ুয়া, অধ্যাপক তাজমেরী ইসলাম, এ জেড মোহাম্মদ আলী, হাবিবুর রহমান হাবিব, জয়নাল আবেদীন ফারুক, আবুল খায়ের ভুইয়া প্রমুখ।
২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের মধ্েয আছেন কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাগপার শফিউল আলম প্রধান, এনপিপির ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বাংলাদেশ ন্যাপের জেবেল রহমান গানি, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বিজেপির আন্দালিব রহমান পার্থ প্রমুখ।
এ ছাড়া অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ, অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ, সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত আছেন।
কূটনীতিকদের মধ্েয ইউরোপীয় ইউনিয়নের পলিটিক্যাল, ট্রেড, প্রেস অ্যান্ড ইনফরমেশন মিনিস্টার কাউন্সিলর কোনস্টানটিনস ভারদাকিস, ব্রিটিশ হাইকমিশনের হেড অব পলিটিক্যাল সেকশন আদ্রিয়ান জনস, জার্মানের পলিটিক্যাল, কালচার অ্যান্ড প্রেস সেকশনের থার্ড সেক্রেটারি ক্রিস্টিয়ান জুরপ্যাল, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভ্যাটিক্যান সিটির সেকেন্ড সেক্রেটারি অ্যান্ড ডিএইচএম লুকা, মারাবেসে, তুরস্কের ডেপুটি হেড অব মিশন ওরহান আইর‌্যাক, চীনের পলিটিক্যাল সেকশনের থার্ড সেকেটোরি লি জুআংইউ, রেডক্রসের বাংলাদেশ শাখার ডেপুটি হেড অব ডেলিগেশন বোরিস কেলেসেভিক, ডেনমার্কের ডেপুটি হেড অব মিশন জ্যাকোব হাউগ্যার্ড, সুইডেনের হেডভিগ সোদারলিন্ড, ইউএনডিপির প্রতিনিধি চ্যারলেস ডেনহেজ, ইন্দোনেশিয়ার ইনফরমেশন, সোশ্যাল অ্যান্ড কালচার সেকেন্ড সেক্রেটারি ফিতরি টিজ্যানদ্রা প্রিজান্তি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।