নেত্রকোণায় অতি বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে হাওরের পর এবার উঁচু এলাকার বোরো ফসলও তলিয়ে যাচ্ছে। বাড়ছে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা। খাদ্য সংকট নিরসনে ত্রাণ সহায়তা পেলেও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানিয়েছে হাওরবাসী। জেলার ১০টি উপজেলার ৬টিই হাওর অধ্যুষিত এলাকা। এখানে বর্ষায় যেমন মাছ, তেমনি শুকনা মৌসুমে উৎপন্ন হয় প্রচুর ধান যা দেশের খাদ্য চাহিদা অনেকাংশে চাহিদা মিটিয়ে থাকে। হাওরের কৃষকের স্বপ্ন হলো মাছ আর ধান। সেই স্বপ্ন চুরমার করে দিয়ে গেল অসময়ের পাহাড়ী ঢল ও অতি বর্ষণ। তারপরও থেমে নেই প্রকৃতির এই বিরুপ আচরণ। সব হারিয়ে অসহায় নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলের কৃষকরা।
নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক ড. মো. মুশফিকুর রহমান জানান, নেত্রকোনার হাওর অঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি ত্রাণ তৎপরতা ও বিতরণ কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। খোলা বাজারে ১৫ টাকা কেজি চাল বিক্রয়ের জন্য হাওর উপজেলাগুলোতে অতিরিক্ত ডিলার নিয়োগ করা হয়েছে। জেলায় বর্তমানে ৪২ জন ডিলারের মাধ্যমে খোলা বাজারে চাল বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া ৫ হাজার ২৫৫ মেট্রিক টন চাল ও সাড়ে ৭ কোটি টাকার মধ্যে এ পর্যন্ত ২৫ লক্ষ টাকা ও ৩৫৫ মেট্রিক টন ভিজিএফ-এর চাল বিতরণ করা হয়েছে। তালিকা তৈরি করে বাকিগুলো বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ বিলাস চন্দ্র পাল জানান, জেলার ৮৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬৯টি ইউনিয়নের প্রায় ৭০ হাজার হেক্টর বোরো ফসল আগাম পানিতে সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে। এ বছর ১ লাখ ৮৪ হাজার হেক্টর বোরো ধান আবাদ করা হয়। আনুমানিক ১ লাখ ৬৭ হাজার ১৮০ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আশরাফ উদ্দিন আহম্মদ বলেন, হাওরে ধান পঁচে পানি দূষিত হয়ে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৮০ মেট্রিক টন মাছ মারা যাওয়ায় ১৬ হাজার ৫২৮ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা শংকর কুমার বসাক জানান, ৮ লক্ষ ১৪ হাজার গবাদি পশু রয়েছে। তার মধ্যে প্রায় ১ লাখ ৮২ হাজার গবাদিপশু ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় রয়েছে এবং তাদের জন্য দানাদার খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত তাদের কোন প্রকার রোগ-বালাই দেখা দেয়নি। মাঠকর্মীরা মাঠে রয়েছেন এবং কাজ করে যাচ্ছেন।
আপনার মতামত লিখুন :