মুছে যাক গ্লানি ঘুচে যাক জরা/ অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা। আজ পহেলা বৈশাখ। শুভ নববর্ষ ১৪২৪। আজ বাংলাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতির রুপময় ছঁটায় উদ্ভাসিত সর্বজনীন উৎসবের দিন । আনন্দ-হিল্লোলে, উচ্ছাসে-উষ্ণতায় দেশব্যাপী স্বাগত জানাবে নতুন বছরকে। অর্থ-সামর্থ থাকুক আর নাই থাকুক সবার হৃদয়ে আজ রবীন্দ্র-নজরুলের সুর জেগে উঠবে-এসো হে বৈশাখ এসো এসো…..কিংবা ….তোরা সব জয়ধ্বনি কর। নতুন প্রজন্মের কাছে মাকসুদের মেলায় যাইরে……
বাংলা নববর্ষের শুভ এ দিনটি এবার উদযাপন করা হচ্ছে এমন সময়ে যখন সারা দেশ রয়েছে অনেকটা জঙ্গী আতঙ্কে। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তদুপরি, আতঙ্কের রেশ কাটছে না। সারাদেশে বৈশাখী উৎসব পালন বিকাল ৫টার মধ্যে সকল আয়োজন শেষ করার ঘোষনা করেছে সরকার। মুক্তাগাছা উপজেলা প্রশাসনও বৈশাখ উদযাপনের আয়োজন সীমিত করেছে। ইতোমধ্যে পূর্বঘোষিত ৫দিনব্যাপী চৈ-বৈ মেলা বাতিল করা হয়েছে। কেবলমাত্র বৈশাখের প্রথম দিনই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে র্যালী, আলোচনা সভা, স্টল প্রদর্শনী ও দিন ব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বরণ করা হবে বাংলা নববর্ষ ১৪২৪। নতুন এই দিনটি পুরনো সব ব্যর্থতা ও আবর্জনার জঞ্জাল সরিয়ে নতুন আশা, কর্মোদ্দীপনা ও প্রাণশক্তিতে উজ্জীবিত হওয়ার ডাক দিচ্ছে। নতুনের কেতন উড়ানো বৈশাখ এসেছে নতুন স্বপ্ন, প্রত্যাশা ও সমৃদ্ধি অর্জনের লড়াইয়ে জয়লাভের স্বপ্ন, প্রত্যয়, প্রেরণা নিয়ে বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন বছরের কাছে মানুষের প্রত্যাশাও-শোনাও নতুন গান।
‘ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা’ পুড়িয়ে ফেলে, হতাশা-অবসাদ-গ্লানি ঝেড়ে মুছে ফেলে নতুন উদ্দীপনায় জাগরনের আহবান জানাচ্ছে বৈশাখ। হিংসা,বিদ্বেষ, কলুষ, কুসংস্কার এবং পশ্চাৎপদতার নিগড় ভেঙ্গে ফেলে, অসুন্দর সমাজ মুক্ত হোক, প্রগতির আলোয় উদ্ভাসিত হোক সমাজ- এ আহ্বান জানাচ্ছে বৈশাখ।যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে যাওয়া গীতি/অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক-এসো হে বৈশাখ ।
আজ ভোরে দিগন্তের তিমিরে সূর্যোদয়ের প্রথম রশ্মি জেগে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই সূচিত হয়েছে বাংলা নববর্ষের জন্মক্ষণ।তখন থেকেই বৈশাখের সর্বজনীন উৎসবে-আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছে সারাদেশ, সব বয়সের মানুষ। শহরের রাস্তা ও উদ্যানে নেমেছে মানুষের ঢল। শুধু তাই নয়, শহর-নগর, গ্রাম-গ্রামান্তর সর্বত্রই বইছে বর্ষবরণের প্রাণোচ্ছল উৎসব-তরঙ্গ।তাপদাহ তুচ্ছ করে, ঝড়জঞ্ঝা উপেক্ষা করে ভোর থেকে সকাল-বিকাল চলবে বৈশাখবরণ।কোথাও গান বাজছে, কোথাও মেলা বসেছে। কান পাতলে শোনা যাচ্ছে ঢাকের শব্দ, ঢোলের শব্দ, বাঁশির শব্দ, নাগরদোলার শব্দ, শিশুর কলরব উচ্ছাস। বৈশাখী মেলায় তাকালেই দেখা যাচ্ছে হাতের চুড়ি, কানের দুল, সুগন্ধি সাবান, হাওয়াই মিঠাই, চুলের ফিতা, নখপলিশ, রঙিন বেলুন, মাটির পুতুল, কাঠের পুতুল, আম কাঁটার চাকু, জিলাপি, খৈ-বাতাসা, ঘর-গৃহস্থালির তৈজষপত্র আরো কত কি!
ইতিহাসে জানা যায়, মোঘল স¤্রাট আকবর প্রায় ৪শ বছর আগে ফসলী সন হিসেবে বাংলা সন বা বঙ্গাব্দের প্রচলন শুরু করেছিলেন। তখনই বঙ্গাব্দের সূচনা হয় বৈশাখের প্রথম দিন থেকেই। সেই থেকে আজ পর্যন্ত তা এ জনপদের মানুষের গর্বিত-ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত। বৈশাখী উৎসব সংস্কৃতির অন্যতম সমৃদ্ধ এক উপাদানে পরিনত হয়েছে। এককালে বাংলা নববর্ষে হালখাতাই মূখ্য ছিল। তার সঙ্গে কিছু উৎসব ছিল, ছিল কিছু আনন্দসম্ভার। এখনো হালখাতা আছে। ক্রমেই মূখ্য হয়ে উঠেছে আনন্দ-উৎসব। নাচ, গান, মেলা, নতুন হালখাতা, মিষ্টিমুখ, মঙ্গলশোভাযাত্রা, নতুন পাঞ্জাবী, শাড়ী, ফতুয়া কেনার ধুম, খাওয়া-দাওয়া, বেড়ানো, শুভ নববর্ষ জানানোর রেওয়াজ-উৎসবে নানা অনুষঙ্গে নববর্ষ উদযাপন নিত্যনতুন মাত্রিকতায় উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়ে চলেছে। ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে, ধনী-গরীব সকল শ্রেনি-পেশার সব বয়সী মানুষের সর্বজনীন উৎসব হিসেবে উদযাপিত হয়ে আসছে এ পার্বণ।
এদিকে বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে মুক্তাগাছা থেকে নির্বাচিত ময়মনসিংহ-৫ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য, তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য, জাতীয়পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দীন আহমেদ মুক্তি। মুক্তাগাছা উপজেলার সর্বস্তরের মানুষকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে সকলের মঙ্গল কামনা করেছেন। তিনি তার শুভেচ্ছাবাণীতে বলেন, বাংলা নববর্ষ আমাদের জাতীয় সংস্কৃতির অন্যতম অনুষঙ্গ। হাজার বছরের লালিত এ ঐতিহ্যকে সমুন্নত রেখে পাশ্চাত্যের আগ্রাসী সংস্কৃতিকে বর্জন করে দেশীয় সংস্কৃতির চর্চায় উজ্জীবিত হয়ে, আমাদের সংস্কৃতিকে অধিকতর সমৃদ্ধশালী করার লক্ষে সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে। যাতে বিশ্ব দরবারে বাঙালী জাতি একটি সংস্কৃতিবান জাতি হিসাবে মাথা উঁচু করে চলতে পারি।
আপনার মতামত লিখুন :